কথিত কৃষকলীগ নেতা শাখাওয়াতের প্রতারণার শিকার স্বয়ং মা ও আপন ভাই!

ঢাকার মিরপুরের কৃষকলীগ লীগ নেতা পরিচয় প্রদানকারী শাখওয়াতের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের শিকার মা ও গ্রীস প্রবাসী আপন ভাই। শাখাওয়াতের প্রতারণার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে এসে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার মধ্যে পারিবারিকভাবে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, আদম পাচার, জায়গা দখল ও চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ।

- Advertisement -

এলাকায় চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে এলেও দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকা শাখওয়াতের বিদেশে মানব পাচার সিন্ডিকেটের কিছুই জানে না প্রশাসন। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিজ ছেলেকে নিয়ে মাদক সিন্ডিকেটও দেশ ও দেশের বাহিরে মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। দেশের বাহিরে নিজ জমিতে গাঁজার চাষ করে সে ছবি প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে শাখাওয়াতের ছেলে ফয়সল।

- Advertisement -google news follower

অনুসন্ধানে জানা যায়, আর্থিকভাবে অসচ্ছল শাখাওয়াত তার ভগ্নিপতি মরহুম জাফর বালীর ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসায় মাথা গোজার ঠাইটুকু পান। নব্বইয়ের দশকে আপন দুলভাই জাফর বালীর অর্থে গ্রীস পাড়ি জমান। গ্রীস পৌঁছেই শাখাওয়াত আর দশটা মানুষের মতো সহজ সরল ও পরিশ্রমের পথে না হেঁটে দ্রুত বড়লোক হবার স্বপ্নে অনৈতিক ও বেআইনী জগতে প্রবেশ করেন৷ জড়িয়ে পড়েন মানব পাচার সিন্ডিকেটের সাথে।

জানা যায়, একজনের পাসপোর্টে অন্যজনের ছবি লাগয়ে (যা গলাকাটা পাসপোর্ট হিসেবি পরিচিত) গ্রীস, ইতালি ও আমেরিকায় লোক পাঠানো শুরু করেন তিনি৷ এদের অনেকেই ইউরোপের যেতে না পেরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এখন বসবাস করছেন, অনেকে আবার অভিবাসন পুলিশের জালে ধরা পরে দেশে ফেরত এসেছেন।

- Advertisement -islamibank

গ্রীস, ইতালি এবং আমেরিকায় যাওয়া পরিচিত লোকদেরকে পাসেপার্ট নানা অজুহাতে শাখওয়াত হোসেন নিজের কাছে জমা রাখতেন। এদের অনেকের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে হাতিয়ে নতুন পাসেপার্ট এর কথা হাতিয়ে নিতো বিপুল পরিমাণ অর্থ। আর লুকিয়ে ফেলা পাসপোর্ট ব্যবহার করা হতো তার আদম বাণিজ্যের কারবারীতে গলা কাটা পাসপোর্ট হিসেবে। তার এই সাজানো নাটকের ভুক্তভোগী একজন বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে জীবন যাপন করছেন।

গ্রীস থাকাকালীন আপন ভাই নাসির হোসেনের নাম ব্যবহার করে যৌথ লাইসেন্সে ব্যবসা পরিচচালনা শুরু করেছিলো শাখওয়াত হোসেন। তবে, কিছু দিন যেতে না যেতেই ভাইয়ের অগোচরে ঢাকা চলে আসেন তিনি। আর তাই, ব্যবসা সংক্রান্ত দাপ্তরিক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন নাসির হোসেন। প্রায় ১১ বছর পর এসব ঝামেলার সুরাহা হয়। এই ১১ বছরে একবারের জন্যেও তিনি দেশে আসতে পারননি৷ জনাব নাসির হোসেনের বিদেশে থাকাকালীন সময়ে তার স্ত্রী সেখানেই (গ্রীসে) মৃত্যুবরণ করেন৷ আপন ভাই শাখাওয়াতের অপকর্মের খেসারত দিয়ে একই কারণে স্ত্রীর লাশ নিয়ে দেশে আসতে পারেন নি৷ পরে নাসির হোসেন স্ত্রীর লাশ দেশে পাঠিয়ে দেন ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর জানাজা ও দাফন কার্যে অংশ নিতে পারেন নি৷

মাত্র কয়েক বছর আগে অন্য ভাই বোনদেরকে না জানিয়ে অসুস্থ্য মাকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পারিবারিক জমিজমা নিজের নামে লিখে নেন শাখাওয়াত। এ বিষয়ে অন্য ভাইবোন মিলে শাখাওয়াতের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির ও দলিল বাতিল চেয়ে আদালতে মামলার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা যায়।

আর্থিক ঝামেলা সংক্রান্ত প্রতারণায় ১৯৯৯ সালে গ্রীস থেকে দেশে ফিরে আসে শাখাওয়াত হোসেন। তখন, তাঁর আপন দুলভাই জাফর বালীর টাকায় বিদেশ ফেরত নিঃস্ব শাখওয়াতকে মিরপুরের আরিফাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে একটি প্লট কিনে দেন।

দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর কিছুদিন পরেই শাখাওয়াত হোসেন নতুন প্রতারণার পথ খুঁজতে থাকে৷ স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারের জন্য কৃষক না হয়েও নিজেকে কৃষকলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত করে সে। ঢাকা মহানগর উত্তরের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়া শুরু করে শাখওয়াত হোসেন৷ এখানে থেকেই আবার নতুন করে শাখাওয়াতের চাঁদাবাজি, হয়রানী ও প্রতারণার নতুন পর্ব শুরু হয়৷ এক সময় যার বাসায় আশ্রিত থেকেছে, যার বদৌলতে জমি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে সেই জাফর বালীর সন্তানরাই এখন শাখাওয়াতের চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও হয়রানির শিকার৷

প্রতারণা ও হয়রানির বিষয়ে শাখওয়াত হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি এসব অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে কথা বলতে তার আরিফাবাদ হাউজি সোসাইটির বাসায় যেতে বলেন।

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM