রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অ্যাকাউন্ট্যান্ট শেখ জামাল আহমেদের বিরুদ্ধে নিজের অফিসের দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছে।
তাঁর আপন বড়ভাই মুজাহেদুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র পাইয়ে দিতে তিনি এমন বলপ্রয়োগ করেছেন বলে ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে পূবাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত শেখ জামাল আহমেদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রেলওয়ে পূবাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা অফিসের নং- আরসি/আউটসোর্সিং/২৩-২৪/এসআর(আরই) দরপত্র আহবান করে। গত ৩১ জানুয়ারি দরপত্র জমাদানের তারিখ ছিল।
অভিযোগ উঠেছে, শেখ জামাল আহমেদ দরপত্র জমাদানের তারিখে তাঁর অফিস (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তরে) কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে অবস্থান করে ৪টি ঠিকাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা দিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
দরপত্রের কাগজপত্র চিনিয়ে নিয়ে জমাদানকারীদের আটকিয়ে রাখেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বলেন, এটা স্রেফ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে পূবাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা বরাবরে চারটি অভিযোগ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এ কর্পোরেশন, করবি কর্পোরেশন, মেসার্স মডার্ন ট্রেডার্স ও আরএস কর্পোরেশন।
মেসার্স এস.এ কর্পোরেশনের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ”আহবানকৃত দরপত্র নং- আরসি/আউটসোর্সিং/২৩-২৪/এসআর(আরই) ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ এর সকল শর্ত অনুসরণ করে দরপত্র দাখিল করতে আমাদের প্রতিনিধি মুহাম্মদ মামুন সকাল পৌণে ১০ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হন।
পরে কার্যালয়ের সামনে দরপত্র দাখিলের আগ মুহুর্তে একাউন্টটেন্ট শেখ জামাল আহম্মদের প্রত্যক্ষ মদদে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি এস.এ কপোরেশনের প্রতিনিধি মুহাম্মদ মামুনকে সেখান থেকে অন্যত্রে ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁর থেকে দরপত্র ছিনিয়ে নেয়।
যার ফলশ্রুতিতে আমরা অন্য স্থানেও দরপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হই। লিখিত অভিযোগে দরপত্র বাতিল করে পিপি এর নিয়ম অনুযায়ী পূণঃ দরপত্র আহবান এবং শেখ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্দে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
একইভাবে মডার্ন ট্রেডার্সের অভিযোগে বলা হয়েছে, টেন্ডার জমা দেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলে কতিপয় দুস্কুতিকারিরা তাদের টেন্ডার ডকুমেন্টস ছিনিয়ে নেয় ফলে তাঁরাও দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হন।
মেসার্স করবী কর্পোরেশনের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, জাফর উল্লাহ নামের তাদের প্রতিনিধি দরপত্র জমাদিতে গেলে কার্যালয়ের শেখ জামাল আহম্মদের মদদে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি দরপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং দরপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিনিধিকে জিম্মি করে রাখে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শেখ জামাল আহমেদ বলেন, আমার বড় ভাই রেলের ঠিকাদার। তিনিও টেন্ডার জমা দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে আমার অফিসে টেন্ডার হওয়ায় আমি অফিসে ছিলাম। কিন্তু কাউকে বাঁধা দেয়নি।
আমার বড় ভাউয়ের উপর ক্ষোভ বা তাদের আক্ষেপ থাকতে পারে। অন্য ঠিকাদাররা আমার বিরুদ্ধে দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আমাকে বলির পাঠা বানিয়েছেন।
রেলওয়ে পূবাঞ্চলের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা ও টেন্ডার কমিটির আহবায়ক মো. সাইদুর রহমান সরকার বলেন, দরপত্র বাক্স জমা দেওয়াকেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি আমাদের উপর বর্তায়, বাইরে কি হয়েছে-সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। সচ্ছতার সাথে দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগ পেয়েছি কিন্তু পিপি বিধিমালা অনুযায়ী এসব অভিযোগ আমলে নেয়ার সুয়োগ নেই।
জেএন/এফও/পিআর