হালদা নদী

প্রবল বর্ষণ আর মেঘের গর্জনে ডিম ছাড়বে মা মাছ

অপেক্ষায় ডিম আহরণকারী-নজরদারিতে প্রশাসন

বিশেষ প্রতিবেদন :

রাজীব প্রিন্স: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত চট্টগ্রামের হালদা নদীতে আনা গোনা বেড়েছে মাছের।

- Advertisement -

কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও মাতা মুহুরীসহ হালদা সংযুক্ত বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে আসতে শুরু করেছে মাছ। কারণ দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র জোয়ার-ভাটা ও মিঠাপানির প্রবাহের হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলছে।

- Advertisement -google news follower

জানা গেছে, প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। প্রবল বর্ষণ ও বজ্রপাত হলে নদীতে পানির গভীরতা বৃদ্ধি পাবে।

বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি অপেক্ষাকৃত ঘোলাটে হলে পানির গভীরতা যেখানে বেশি, কিংবা পানির তীব্র ঘূর্ণিস্রোতেই ডিম ছাড়বে মা মাছ।

- Advertisement -islamibank

যদি চৈত্র মাসে প্রবল বর্ষণ ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হয় এবং ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া যায় তাহলে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে।

নৌকা ও জাল নিয়ে হালদা পাড়ে ইতিমধ্যেই প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করেছে রাউজান-হাটাহাজারীর ডিম সংগ্রহকারীরা। হালদার দুই পাড়ে ডিম থেকে রেনু পোনা ফোটানোর সরকারিভাবে স্থাপিত হ্যাচারীগুলোর সংস্কার কাজ চলছে।

তাছাড়া সনাতনী পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর জন্য নদীর তীরে মাটি খনন করে মাটির কুয়া তৈরি করছে ডিম সংগ্রহকারীরা। কেউ কেউ ডিম আহরণের প্রধান উপকরণ নৌকার মেরামত ও রং করার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

তবে চৈত্র মাসে নদীতে মা মাছের দেওয়া ডিম দ্রুত বর্ধনশীল। তাই এই ডিমের প্রতি পোনা ব্যবসায়ী ও মাছ চাষিদের আগ্রহ বেশি।

এদিকে হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন নদী, খাল ও ছড়া থেকে হালদা নদীতে মাছের আগমন অবাধ, নিরাপদ করতে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মৎস্য বিভাগ ও নৌ-পুলিশ সার্বক্ষণিক নদী পাহারা ও অভিযান জোরদার করছে।

নদী থেকে মাছ চুরি প্রতিরোধ করতে নদীর পাড়ে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা। এই ক্যামেরার মাধ্যমে উপজেলা, জেলা এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে নদীতে নজরদারি করা হচ্ছে। নদীতে নৌ-পুলিশের টহল ও প্রশাসনের তদারকিও জোরদার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালদা নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বড়ুয়া পাড়া, দক্ষিন গহিরা, সোনাইর মুখ, পশ্চিম বিনাজুরী, গোলজার পাড়া, কাসেম নগর, আজিমের ঘাট, মগদাই, পশ্চিম আবুরখীল, নাপিতের ঘাট, খলিফার ঘোনা, উরকিরচর, মাইশকরম, সার্কদা, মোকামী পাড়া, কচুখাইন এবং হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, নয়াহাট, আমতোয়া, মাছুয়া ঘোনা, বাড়ীঘোনা, মাদ্রাসা, দক্ষিণ মাদ্রাসা এলাকায় নদী থেকে ডিম আহরণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ডিম আহরণকারী ও সংশ্লিষ্ট হ্যাচারীর কর্মকর্তারা।

হালদা নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম বিনাজুরীর ডিম আহরণকারী সাজ্জাদ সওদাগর জানান, প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যে কোনো সময়ে মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে।

সাধারণত পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েকদিন আগে-পরে জোয়ার-ভাটার সময় প্রবল বর্ষণ ও বজ্রপাত হলে নদীতে যখন পাহাড়ি ঢলের স্রোতের পানি নেমে আসে তখন কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস) মা মাছ নদীতে এসে ডিম ছাড়ে।

হাটহাজারীর মাছুয়া ঘোনা এলাকার ডিম আহরণকারী লিটন দাশ জানান, হালদা নদী সংযুক্ত মাতামুহুরী, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, চেংখালী, পোরাকপালী, কাটাখালী, বোয়ালিয়া, সোনাই প্রভৃতি খাল ও নদীর খাড়িতে অবস্থানকারী মা মাছ গুলো ইতিমধ্যে ডিম ছাড়ার উদ্দ্যেশে মিঠা পানির নদী হালদায় আসা শুরু করেছে।

তাই নদী থেকে ডিম আহরণের জন্য ডিম সংগ্রহের সরঞ্জামগুলো মেরামতসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। মেঘের গর্জন শুরু হলেই নদী পাড়ে চলে যাবো।

হালদা নদীর গবেষক চবি’র প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, বর্তমানে হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় ডিমসংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল, কূয়া, হ্যাচারী ও আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে বড় আকারের মা মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে প্রজনন মৌসুমকে মা মাছের নিরাপদ করতে মা মাছ নিধন, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল, বিভিন্ন উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি হালদা সম্পৃক্ত সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

এদিকে নদীর মাছ শিকার রোধ করতে দুই পাড়ে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ। তা ছাড়া মাছ শিকারিদের আটক করতে নদীতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সোলারচালিত বোট দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মসিউজ্জামান জানান, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হচ্ছে। সেই লক্ষে আমাদের (প্রশাসনের) নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

নদীতে মাছের অবাধ বিচরণ ও মাছের মজুদ বৃদ্ধি জীববৈচিত্র্য ও ডলফিন রক্ষা করতে সার্বক্ষণিকভাবে নদীর দুই পাড়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, আনসার-ভিডিপি কাজ করছে।

কেউ যদি অবৈধ ভাবে নদী থেকে মাছ শিকারের চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাউজান উপজেলা মৎস সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্ল্রাহ আল মামুন বলেন, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে, হালদায় আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, নদীর আহরিত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য সরকারি হ্যাচারিগুলো ইতিমধ্যে সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা হয়েছে।

বলেন, হাটহাজারী তিনটি হ্যাচারিসহ রাউজানের গহিরা মোবারক খীল হ্যচারি সচল রয়েছে। রাউজানের পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়ায় অকোজা হয়ে পড়ে থাকা দুটি হ্যচারি পুনঃনির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM