শ্রীমতি খাল ভাঙনে প্লাবিত ১০ গ্রাম

‘শ্রীমতি খাল আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এখন যেখানে খাল, সেখানে দুই বছর আগেও আমাদের ভিটা ছিল, পুকুর ছিল। ভাঙনের পর খালপাড়ে আবার নতুন করে ঘর তুলেছি।
শ্রীমতি খাল ভাঙনে প্লাবিত ১০ গ্রাম | 66335283 336752550577518 3264936294769229824 n

- Advertisement -

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কয়েকস্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। কখন যে পাহাড়ি ঢলের পানি ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ঘরবাড়ি! ভয়ে রাতে ঘুম আসে না।’

- Advertisement -google news follower

পটিয়ার শ্রীমতি খালপাড়ে অবস্থিত ভাটিখাইন গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সুরুজ মিয়া (৫২) এভাবেই তার আশঙ্কার কথা জানালেন।

শ্রীমতি খালের বেড়িবাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙনের কারণে ভিটে-বাড়ি হারানোর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন সুরুজ মিয়ার মতো পটিয়ার ১০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

- Advertisement -islamibank

শ্রীমতি খাল ভাঙনে প্লাবিত ১০ গ্রাম | 67379751 2142513749191582 838846416154525696 n

কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পটিয়ার ভাটিখাইন বাজারে পশ্চিম দিকে শ্রীমতি খালের দুই স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে একই ইউনিয়নে ভাটিখাইন সেতুর পূর্বপাশে, ধোপাপাড়া এলাকায়ও বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়ি-ঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

শ্রীমতির খালপাড়ের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, খালের উভয় পাশে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাবে হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, মাছের ঘের ও ফসলি জমি।

এছাড়া চলতি বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি এসে পৌরসভার পাইকপাড়া, ভাটিখাইন, করল, ঠেগরপুনি, উত্তর ছনহরা, মেলঘর, জঙ্গলখাইন, উত্তর আশিয়া ও দক্ষিণ আশিয়াসহ ১০ গ্রাম প্লাবিত করবে। এতে অন্তত ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘর হারাবে।

এব্যাপারে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি জয়নিউজকে বলেন, খবর পেয়ে আমি শ্রীমতি খাল পাড়ে ছুটে যায়। ভাঙনের কারণে অনেক স্পটে ফাটল দেখা যাচ্ছে। আমি দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পটিয়া উপজেলায় ভাঙন সংস্কারে জন্য ৬০ লক্ষ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছি।

এসময় তিনি আরো বলেন, ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম্প করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শ্রীমতি খালের পাহাড়ি ঢলের পানি থেকে রক্ষা পাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটিয়ার ভাটিখাইন গ্রামের ৪নং ওয়ার্ড়ের ছনহরা সড়ক ও ৫নং ওয়ার্ড়ের সড়ক ভেঙে গেছে। এছাড়াও ৪নং ওয়ার্ডের নুরুল হক সওদাগর বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ ও সাবেক চেয়ারম্যান মাহাববুল আলমের বাড়ি যাওয়ার বেড়িবাঁধ ও রাস্তাটি। শ্রীমতি খালের উভয় পাশে প্রায় ১০০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে খালের সঙ্গে মিশে গেছে।

প্রতিবছর বর্ষায় শ্রীমতি খালের পানিতে তলিয়ে যায় বাড়ি-ঘর। পুকুরের মাছ। বীজতলা। এবারও অতি বৃষ্টির ফলে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শ্রীমতি খালের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পটিয়ার শ্রীমতি খাল এলাকার একাধিক পয়েন্টে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পাহাড়ি ঢলের পানিতে বিলীন হয়ে যায়।

এব্যাপারে ভাটিখাইন গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা জয়নিউজকে জানান, প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে কোনোরকম বালি ও মাটির প্রলেপ দিয়ে মেরামত করে আসছে ভাটিখাইন শ্রীমতি খালের বেড়িবাঁধ। তাই তেমন টেকসই হয় না বেড়িবাঁধটি। যার কারণে কয়েক বছর পর পর বেড়িবাঁধটি মেরামত করতে হয়।

বর্ষা আসলে পাহাড়ি ঢলের পানি নিচে থলিয়ে যায় ভাটিখাইন শ্রীমতি খালের উভয় পাশের গ্রামরক্ষা বাঁধটি। ভাটিখাইন শ্রীমতি খালের উভয় পাশের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নিলে প্রতিবছর সরকারি অর্থ খরচ হবে, জনগণের কোনো উপকার হবে না। তাই আমরা মনে করি স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ভাটিখাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বকতিয়ার আলম জয়নিউজকে বলেন, এব্যাপারে শ্রীমতি খালের ভাঙনের বিষয়টি ইতোমধ্যে পটিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও হুইপ সামশুল আলম এম পি এবং পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ভাঙন মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান।

ভাটিখাইন ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. নজরুল ইসলাম জয়নিউজকে জানান, ছনহরা সড়কে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। সাধারণ জনগণ শ্রীমতি খালের ব্যাপক ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে নুরুল হক সওদাগরে বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জয়নিউজ/কাউছার/বিআর
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM