ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে ডেঙ্গু,চাপ বাড়ছে রোগীর

ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

- Advertisement -

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ, প্লাটিলেট পরিষেবা দাম বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীদের খবর জোগাতে হিমসীম খাচ্ছে পরিবারগুলো।

- Advertisement -google news follower

গত সাপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার প্রতি ডেঙ্গু রোগীর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে খরচ করছে। কিস্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই খরচ আরো বেশি। এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।

কয়েকটি হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ ব্যাপক আকারে বেড়েছে। বিছানা, মেঝে, বারান্দা কোথাও জায়গা মিলছে না।

- Advertisement -islamibank

রোগী বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে সেবা প্রদান করতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানান ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়।

একই সঙ্গে রোগী বাড়ায় ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট, পরীক্ষার জন্য কিট এবং ডিএনএস স্যালাইনের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কটে রোগীদের চিকিৎসা সোব ব্যাহত হচ্ছে।

এছাড়া জেলা, উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড না থাকা, রক্তের প্লাটিলেট দেয়ার ব্যবস্থা না থাকা, আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে রোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছে, চলতি মাসে প্লাটিলেট পরিষেবার চাহিদা ৫-৬ গুণ বেড়েছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে সর্বশেষ আগস্ট মাসে। এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে, যা এর আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে দেড়গুণ বেশি। এ মাসে মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক।

আগস্টের ৩১ দিনেই ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৩৪২ জন। আর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৪ জন। এছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৪২ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৫৯৭ জন। এর আগে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছিল ২০২২ সালে। গত বছর ৬১ হাজার রোগীর মধ্যে মারা যায় ২৮১ জন।

এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাবের সময় আক্রান্ত হয়েছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ, মারা যায় ১৭৯ জন। সে বছর বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যাক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় বছরটি বাংলাদেশের জন্যও ছিল সতর্কবার্তার।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর দেশব্যাপী গ্রামীণ এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ বেড়েছে তীব্রহারে। গত কয়েক মাস ধরে গ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

জরিপে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণের জন্য দায়ী ডমিনেন্ট স্ট্রেইন হলো এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য দায়ী ভেক্টর এডিস মশা। এ প্রজাতির মশার দুটি প্রধান স্ট্রেইন- এডিস অ্যাজিপটি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস।

এডিস অ্যাজিপটি মূলত শহরাঞ্চলে বেশি, আর গ্রামাঞ্চলে বেশি এডিস অ্যালবোপিকটাস। এসব মশা গাছের গুঁড়ি, কলাগাছের বাকল এমনকি পাতায় জল জমে থাকা পানিসহ বিভিন্ন জায়গায় ডিম পাড়ে।

কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস এজিপটির তুলনায় এডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি জটিল। এই জটিলতার কারণে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এডিস অ্যালবোপিকটাস সাধারণত প্রাকৃতিক জলাধারে বেড়ে ওঠে।

তাদের মতে, এডিস মশা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর মধ্যে পরিকল্পনা, সমন্বয় ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাস হবে ডেঙ্গুর জন্য আরও ভয়ংকর। তাই দ্রুততার সাথে মশা নিধন করতে হবে।

এদিকে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এখনো ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় ডাক্তাররা বলছেন বাইরে থেকে স্যালাইন নিয়ে আসতে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্যালাইন সঙ্কটের কথা না বললেও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন, হাসপাতালে ভর্তির সময়েই স্যালাইন লাগবে বলে ডাক্তারের সহকারীরা বলে দিচ্ছেন। সব ফার্মেসিতে এখন স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।

ফার্মেসিগুলোতে গেলেই সাথে সাথে বলে দেয়া হচ্ছে তাদের কাছে স্যালাইন নেই। কিন্তু কিছু ফার্মেসি থেকে বের হয়ে গেলেই একশ্রেণীর লোক পেছনে পেছনে আসছে। কানে কানে বলছে, কিছু বেশি দিলে স্যালাইন দেয়া যাবে। রোগীর স্বজনরা কোনো কথা না বলে বেশি টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনছেন। অবশ্য ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে স্যালাইন মজুদ করা ফার্মেসীগুলোকে জরিমানাও করা হচ্ছে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM