চবির ইতিহাসে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অনুদান দিচ্ছি: উপাচার্য ড. ইফতেখার

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি একজন সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক। গবেষণায় মৌলিক অবদানের জন্য পেয়েছেন ইউজিসি গোল্ড মেডেল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুলব্রাইট ভিজিটিং ফেলোশিপসহ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা, ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স এবং অতিথি শিক্ষকতা করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, গবেষণাখাতে পাঁচগুণ অনুদান বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসে ইতিবাচক প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চা করে উপাচার্য পদে তিন বছর মেয়াদ সম্পন্ন করলেন। সম্প্রতি তাঁর মুখোমুখি হয়েছে জয়নিউজবিডি।

জয়নিউজবিডি: তিন বছর পার করলেন উপাচার্য পদে। আপনি কি সফল?

- Advertisement -

উপাচার্য: কোন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে কারো সফলতা কোন একক ব্যক্তির সফলতার উপর নির্ভর করে না। সমগ্র প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীবাহিনী যদি সাড়া দেয়, তবেই ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। সেই ইতিবাচক ভাবমূর্তি ব্যক্তিকে সফল করে তোলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানসৃজন, গবেষণা, শিক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ দক্ষ জনসম্পদ তৈরি। সেই কাজে আমার নিরন্তর প্রচেষ্টা আছে। বিগত তিন বছর এই কাজগুলোই হয়েছে। আর এগুলোই একটি সফল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাপকাঠি।

- Advertisement -google news follower

জয়নিউজবিডি: বিগত তিন বছর আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি?

উপাচার্য: আমার যে প্রচেষ্টা ছিল, আমি সেটা পূরণ করতে পেরেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি রোধ করা। বিশ্ববিদ্যালয়কে পড়াশোনা ও গবেষণার উপযুক্ত করে তোলা। সেজন্য প্রয়োজন ছিল গবেষণা খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি। আমি গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছি। এতদিন পর্যন্ত শিক্ষকদের গবেষণায় বরাদ্দ করা হতো সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। সেই গবেষণা অনুদানকে বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে এটা প্রথম ঘটনা। গবেষণার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মহোদয় বিশ্বখ্যাত নেচার জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়েছেন।

- Advertisement -islamibank

জয়নিউজবিডি: গবেষণায় অনুদান তো দিচ্ছেন, শিক্ষকরা কি আগ্রহী গবেষণায়?

উপাচার্য:  এই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলে তরুণ শিক্ষকরা প্রচুর গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দিয়েছেন। একেকটি গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা থেকে কমপক্ষে দেড়-দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন সম্প্রতি। এগুলো কিন্তু অগ্রগতি। সম্প্রতি মালয়েশিয়াতে অর্ধশতাধিক তরুণ শিক্ষকদের নিয়ে আমি গবেষণা প্রকল্প বিষয়ক ট্যুরের উদ্যোগ নিয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক আছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গুরুত্বপূর্ণ পদে ডাক পাচ্ছেন। তারা আমাকে জানাচ্ছেন, গবেষণায় আমার প্রশাসনের প্রণোদনার কারণে তারা দেশে-বিদেশে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে প্রবন্ধ পাঠিয়ে চবির সুনাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গবেষণায় প্রণোদনা দিয়ে আমার প্রশাসন শিক্ষকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে যাবে।

জয়নিউজবিডি: বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জটিলতার সমাধান কতটুকু হয়েছে?

উপাচার্য: অর্ধশত বছরের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ছিল সীমানপ্রাচীর বিহীন। নানা ব্যক্তির দখলে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি। প্রভাবশালী নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে নির্মাণ করেছি ঘরবাড়ি। আমরা এসব জমি অনেকাংশে দখল মুক্ত করেছি। তবে এ সাফল্য আমার একার না। সবার যৌথ প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।

জয়নিউজবিডি: বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি শিক্ষার্থী নির্দেশনা কেন্দ্র রয়েছে। ২০০৯ সালে এটি চালু  হলেও এখনো পর্যন্ত নির্দেশনা কেন্দ্রের কোন নীতিমালা তৈরী হয়নি। এটা নিয়ে সম্প্রতি কথা উঠেছে।

উপাচার্য: ছাত্রছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের জন্য আমরা একটা পদ তৈরী করেছি। বর্তমান বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। অতি দ্রুত সিন্ডিকেট থেকে পাস করিয়ে একটি নীতিমালা করা হতে পারে। আমি যথাযথ পরিষদে এটি তুলবো।

জয়নিউজবিডি: স্বাধীনতা ভাস্কর্য বানালেন। এর নাম ‘জয় বাংলা’ কেন হলো?

উপাচার্য: মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। কারণ এই জয়বাংলা স্লোগান দিয়েই সমগ্র বাঙালি জাতি এবং মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশকে স্বাধীন করার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।

জয়নিউজবিডি: জয়বাংলা ভাস্কর্যটি কখন উদ্বোধন হচ্ছে?

উপাচার্য: একসময়ের মৌলাবদের ঘাঁটি খ্যাত এই ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারতেন না। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সর্বপ্রথম বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যূরাল স্থাপন করি। এটি এখন প্রগতিশীলতার একটি নির্দেশক চিহ্ন। জয় বাংলা ভাস্কর্যও তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হবে। সব অগ্রগতি সুসম্পন্ন। আশা করি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে।

জয়নিউজবিডি: আপনি কি মনে করেন চবির আবাসিক হল সমূহের নাম ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘শেখ হাসিনা’ নামকরণের ফলে দলীয় রাজনীতির চর্চা হচ্ছে?

উপাচার্য: বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তিনি যে ত্যাগ করেছেন তা দুনিয়ার ইতিহাসে সম্পূর্ণ বিরল এক ঘটনা। তাঁর এ ঋণ আমরা কোন কিছুর বিনিময়ে শোধ করতে পারব না। পিতার জন্য স্মরণীয় কিছু করা সন্তানের কর্তব্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিছিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। গত দশ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় হাজার কোটি টাকা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। যার ফলে আমরা আজ সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস পেয়েছি। আবাসিক হলগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে আবাসিক সুবিধা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বাস্তবায়িত হবে। জাতির কৃতি সন্তানদের জন্য কৃতজ্ঞতার উদাহরণ সৃষ্টি করতে এই নামকরণ, এখানে রাজনীতি নয়, কৃতজ্ঞতা পোষণ করাটাই মুখ্য।

জয়নিউজবিডি: আপনি সম্প্রতি গবেষণায় মৌলিক অবদানের জন্য ইউজিসি গোল্ড মেডেল পেলেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?

উপাচার্য: হ্যাঁ। আমি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে থেকে গবেষণায় মৌলিক অবদানের জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেছি। আমার গবেষণা গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। এর বিষয়বস্তু সমাজের দলিতদের নিয়ে। গবেষণার প্রজেক্ট লিডার ছিলেন এস কে তওরাত। তিনি জনলাইন ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস এর প্রফেসর এবং ইন্ডিয়ান গ্রান্ড কমিশনের চ্যায়ারপার্সন ছিলেন। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের খুব ঘনিষ্ঠজন। ডেনমার্ক সরকার দলিতদের নিয়ে কাজ করার জন্য একটি গুরুদায়িত্ব দেয় তৎকালীন ভারত সরকারের উপর। প্রজেক্ট লিডার এস কে তওরাতই আমাকে বাংলাদেশ থেকে সিলেক্ট করেন। বাংলাদেশের সমাজে দলিতদের সামাজিক কাঠামো নির্ণয় ছিলো আমার গবেষণার বিষয়। ঢাকায় ১৩ টা কলোনি আছে যেখানে ওরা বসবাস করে, আমি সেখানে ফিল্ড ওয়ার্ক করেছি।

 

চবির ইতিহাসে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অনুদান দিচ্ছি: উপাচার্য ড. ইফতেখার | Chittagong University Shuttle train 05

জয়নিউজবিডি: আপনার ওই গবেষণার সহযোগী কে কে ছিলেন?

উপাচার্য: নেপাল থেকে এসেছেন গবেষণার জন্য প্রফেসর কৃষ্ণা, শ্রীলংকার প্রফেসর টোরন, পাকিস্তান থেকে  মিস্টার আনসারী। গবেষণা শুরু হয় ২০০৪-০৫ সালের দিকে।

জয়নিউজবিডি: আপনাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?

উপাচার্য: কিছুদিন আগে হঠাৎ বিদেশি একটি নাম্বার থেকে ফোন করে গালিগালাজ শুরু করে এক ব্যক্তি। পরে আমাকে শেখ হাসিনার দালাল মন্তব্য করে জবাইয়ের হুমকি দেয়া হয়। এর কয়েকদিন পর আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়। আমি মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতার কথা বলি। ধর্মান্ধ মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি। সুতরাং আমার কাজ আমি করে যাবো, কাপুরষ হুমকি দিয়ে যাবে। আমি এতে মোটেও ভীত নই। বিচলিত নই।

জয়নিউজবিডি: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা বিশ্বমানের জায়গায় পরিণত করে পড়ালেখার উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই আমার প্রথম প্রত্যাশা। এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কোন ভিশন-মিশন ছাড়াই এতদিন চলেছে। ওয়েবসাইটে আমরা ভিশন-মিশন যুক্ত করেছি। দারিদ্রমুক্ত ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাবান্ধব ও প্রগতিশীল ক্যাম্পাস বানানোর সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, এটিই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

জয়নিউজবিডি: আপনাকে ধন্যবাদ।

উপাচার্য: জয়নিউজের মাধ্যমে সকল পাঠক, আমার সহকর্মী-শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জয়নিউজকেও ধন্যবাদ।

 

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM