তীব্র গরমে খামারেই মারা যাচ্ছে ২০-৩০ শতাংশ মুরগি

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির সীমানায় বেতবুনিয়া পোলট্রি ফার্মে চলমান দাবদাহের কারণে গত ১৫ দিনে তিন হাজার মুরগি মারা গেছে। এতে খামার মালিকের প্রায় সাত লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। দাবদাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। পরবর্তী সময়ে মুরগির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

- Advertisement -

বেতবুনিয়া পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী তমিজ উদ্দিন বলেন, ছোট-বড় মিলিয়ে তাঁর ১২টি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রতি চালানে ৩০ হাজার মুরগির বাচ্চা লালন-পালন করে মুরগি উৎপাদন করা সম্ভব। দাবদাহের কারণে তিনি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। তীব্র দাবদাহে মুরগি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে।

- Advertisement -google news follower

বেতবুনিয়া পোলট্রি ফার্মের মতো সারা দেশে ক্ষুদ্র খামারিদের মুরগি মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি। এমন পরিস্থিতিতে লোকসান কমাতে খামারিরা কম দামে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

মুরগির বিভিন্ন খামার সূত্রে জানা যায়, মুরগি পালনের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

- Advertisement -islamibank

কিন্তু দেশের কোথাও কোথাও সেটি ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশের বেশির ভাগ খামারে মারা যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুরগি। স্বাভাবিক সময়ে মৃত্যুহার ২ থেকে ৫ শতাংশ। মুরগি নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামীণ পর্যায়ে প্রায় ৩০ শতাংশ খামার। মুরগির মাংস ও ডিমের উৎপাদন এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে।এটি ২০ থেকে ২৫ শতাংশে পৌঁছতে পারে।

দাবদাহের কারণে খামারিদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়া শুরু হওয়ার আগে বড় খামারিদের ডিমের উৎপাদন খরচ ছিল ১০ টাকা ৭৭ পয়সা এবং ছোট খামারিদের ১১ টাকা সাত পয়সা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির (লাইভ) উৎপাদন খরচ ছোট খামারিদের ১৬৩ টাকা ২৩ পয়সা। ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রিশিল্প সমিতির মহাসচিব খোন্দকার মো. মোহসিন বলেন, তীব্র দাবদাহ ও বিদ্যুিবভ্রাটের কারণে মুরগির অস্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। এখন মৃত্যুহার একটা পর্যায়ে রয়েছে। সামনে তা আরো বাড়তে পারে। মুরগির ওভারি বা ডিম্বাশয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই মুরগিগুলো দু-এক সপ্তাহ পরে মারা যেতে পারে। প্রচণ্ড তাপ থেকে মুরগি বাঁচাতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কিন্তু বাজারে মুরগির সেই দাম পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে কমেছে মুরগি ও ডিমের চাহিদা। ফলে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা।

পোলট্রিশিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়। দেশে মোট বাণিজ্যিক পোলট্রি খামার দুই লাখ পাঁচ হাজার। এর মধ্যে নিবন্ধিত পোলট্রি খামার ৮৫ হাজার ২২৭টি। ছোট-বড় শতাধিক হ্যাচারি ও ১০টি জিপি (গ্র্যান্ড প্যারেন্ট) ফার্ম রয়েছে।

এসব ছোট-বড় হ্যাচারি থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ ব্রয়লার বাচ্চা ও প্রায় চার-পাঁচ লাখ লেয়ার বাচ্চা উত্পন্ন হয়, যার মাধ্যমে মুরগি লালন-পালন করে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। কিন্তু দাবদাহের কারণে মুরগির মাংস উৎপাদন কমে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে খামারিদের সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপের কথা জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পশু ও পাখি (মুরগি) খামারের তথ্য সংগ্রহের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করেছি। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যেসব খামারে টিনের ছাউনি, তা ঠাণ্ডা রাখতে চটের বস্তা ভিজিয়ে টিনের চালে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। খামারের ভেতর বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে বলা হচ্ছে।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM