তীব্র গরমে ঝুঁকিতে ওষুধের কার্যকারিতা

অনলাইন ডেস্ক

যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও অসুস্থতায় জীবন রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করে ওষুধ। ওষুধের কার্যকারিতায় তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। কিন্তু দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের কারণে ওষুধের কার্যকারিতা হুমকির মুখে পড়েছে। দেশে প্রচলিত বেশিরভাগ ওষুধের সংরক্ষণ তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াল। কিন্তু গত এক মাস দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশে রয়েছে। এমন অবস্থায় তাপদাহে ওষুধের শেলফ লাইফ ও কার্যকারিতা কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

- Advertisement -

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে ২৯৫টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার বেশি ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করছে। এছাড়া ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক ও হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও ওষুধ উৎপাদন করছে, যা দেশের দুই লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি নিবন্ধিত ফার্মেসিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মডেল ফার্মেসির সংখ্যা মাত্র ৫২৮টি।

- Advertisement -google news follower

জাতীয় ওষুধ নীতি-২০১৬-এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক থাকলেও মডেল ফার্মেসিগুলো ছাড়া বেশিরভাগ দোকানে তাপমাত্রার নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

ফার্মেসি ছাড়াও রোগ ভেদে সাধারণ মানুষ দীর্ঘমেয়াদে নানা ওষুধ বাড়িতে সংরক্ষণ করে গ্রহণ করছে। তীব্র তাপদাহে এসব ওষুধের কোনোটাই সঠিক তাপমাত্রা অনুসরণ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।

- Advertisement -islamibank

ওষুধ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ একটি সংবেদনশীল পণ্য। প্রতিটি ওষুধের নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এটি না মানা হলে ওষুধের শেলফ লাইফ (প্যাকেট খোলার আগে সংরক্ষণ সময়কাল) ও গুণাগুন নষ্ট হতে পারে। এতে রোগীর রোগ সারবে না। ক্ষেত্র বিশেষে ক্ষতির কারণও হতে পারে।

বেশি তাপমাত্রায় কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি

ওষুধের ওপর তাপের প্রভাবের বিষয়ে কথা হয় শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এফ এম নাজমুস সাদাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওষুধের কার্যকারিতায় তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। এটি এক্সপায়েরির সঙ্গে সম্পর্কিত। যাকে আমরা শেলফ লাইফ বলি। ওষুধের গায়ে শেলফ লাইফ লেখা থাকে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই শেলফ লাইফটি কমতে থাকে। যেমন একটি ওষুধের গায়ে শেলফ লাইফ ২০২৬ সাল দেওয়া আছে। সাধারণত ওষুধ সংরক্ষণের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার নিয়ম। এখন আমাদের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা এর কাছাকাছি। এর কারণে এক্সপায়েরি ডেটে কিছুটা সমস্যা হবে। বিশেষ করে সিরাপ বা লিকুইড জাতীয় ওষুধে এর প্রভাব পড়বে। সলিড ওষুধের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম পড়বে। তারপরেও শেলফ লাইফ কিছুটা কমে যাবে।

মানুষদের প্রতি পরামর্শ থাকবে তারা যেন ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনেন। দোকানটা যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে ওষুধ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বাংলাদেশে ওষুধের দোকানগুলো মান নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সচেষ্ট না। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ মানুষের বাসায় এসি নেই। সেখানে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিশ্চিত করা কঠিন। এ অবস্থায় যথাসম্ভব অন্ধকার ও ঠান্ডা জায়গায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখতে হবে এমন নয়।
ড. এ এফ এম নাজমুস সাদাত, চেয়ারম্যান, ফার্মেসি বিভাগ,শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয় জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুস সাদাত বলেন, তাপমাত্রায় শেলফ লাইফ কমে আসে মানে এমন নয় যে, ২০২৬ সাল থেকে একদম এক মাসে নেমে আসবে। আবার কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলো তাপমাত্রা সেনসেটিভ। যেমন কিছু ওষুধকে ৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে রাখা হয়। ফ্রিজিং করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এগুলোকে ফ্রিজে রাখার জন্য বলা হয়। এছাড়া বাকি ওষুধগুলো তাৎক্ষণিকভাবে নষ্ট হওয়ার মতো নয়। একইসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, সম্ভাবনা কম মানে একদমই নষ্ট হবে না তেমন নয়। সবকিছুরই ব্যতিক্রম রয়েছে। ওষুধ তৈরি করার সময় যেসব বিষয় মাথায় রাখা হয়, সেই হিসেবে এত দ্রুত নষ্ট হওয়ার কথা না। তবে শেলফ লাইফ কমবে।

তাপমাত্রা উল্লেখ করা ওষুধের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাজমুস সাদাত বলেন, ২৫ ডিগ্রি অনেক কম তাপমাত্রা। যেহেতু উল্লেখ করা দেওয়া হয়েছে তাই সেই তাপমাত্রার নিচে রাখায় ঝুঁকিমুক্ত। যেগুলোতে উল্লেখ নেই সেগুলো ৩০ ডিগ্রির নিচে রাখার জন্য বলা হয়। এটা ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গেলে অবশ্যই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ওষুধে নানাবিধ উপাদান ব্যবহার করা হয়। এর নির্দিষ্ট কিছু কাজ রয়েছে। এটি সংরক্ষণের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা উল্লেখ করা থাকে। তাপমাত্রা এতে পরিবর্তন আনতে পারে। অধিক তাপমাত্রায় অল্প কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো নষ্ট হবে না।

কিন্তু দীর্ঘসময় থাকলে কার্যকারিতা কমতেও পারে। তাই দোকানদারদের ফ্রিজ ও সঠিক তাপমাত্রা মেইনটেইন করা জরুরি। অনেক দোকানে এসি রয়েছে, তারা এর মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে। যাদের নেই তাদের ওষুধ সংরক্ষণের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে বাসা-বাড়িতে এসি না থাকলে ঠান্ডা ও অন্ধকার স্থানে রাখাটাই ভালো। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ফ্রিজে রাখাটা নিরাপদ হতে পারে।

অধিক তাপমাত্রায় ওষুধ সেবনে ক্ষতির সম্ভাবনা কতটা?

ক্ষতিকর দিকের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. নাজমুস সাদাত বলেন, প্রথমত ওষুধের মেয়াদ বা কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে তা যে রোগের জন্য ব্যবহার হচ্ছে সেখানে কাজ করবে না। আপনি হয়তো ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন। এর কাজ রক্তের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে তা কমবে না। বা রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন কিন্তু তা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে না। দ্বিতীয়ত ওষুধ যখন নষ্ট হয়, তখন কিছু বাই-প্রোডাক্ট বা মেটাবলাইস তৈরি হয়। আমাদের দেশে ক্ষতিকর বাই-প্রোডাক্ট খুব কম ওষুধের মাঝেই আছে। শেলফে রাখা ওষুধগুলোর তেমন টক্সিক হয় না। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। তবে আমরা বলে থাকি সব ওষুধই আসলে বিষ। অনেক বেশি পরিমাণে গ্রহণে ক্ষতি হতেও পারে। তাই ওষুধ সেনসেটিভ পণ্য হিসেবে তাপমাত্রার বিষয়টি কঠোরতার সঙ্গে মেইনটেইন করা উচিত।

করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষদের প্রতি পরামর্শ থাকবে তারা যেন ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনেন। দোকানটা যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে ওষুধ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বাংলাদেশে ওষুধের দোকানগুলো মান নিয়ন্ত্রণে খুব একটা সচেষ্ট না। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ মানুষের বাসায় এসি নেই। সেখানে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিশ্চিত করা কঠিন। এ অবস্থায় যথাসম্ভব অন্ধকার ও ঠান্ডা জায়গায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখতে হবে এমন নয়।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM