গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের

অনলাইন ডেস্ক

মুন্সীগঞ্জে তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। টানা প্রচণ্ড এই গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শাকসবজির ক্ষেত। চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, বেগুন, করলা, টমেটো, শসা ও মরিচের মতো সবজির ওপর গরমের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। পুড়ে মরে যাচ্ছে গাছ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। সকাল-বিকাল ক্ষেতে পানি দিয়েও গাছ বাঁচাতে পারছেন না। এতে সবজির উৎপাদন নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন তারা।

- Advertisement -

স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের সুখবাসপুর, বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের নাহাপাড়া, পঞ্চসার ইউনিয়নের রতনপুরসহ কয়েকটি গ্রামে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু তীব্র গরমে পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে গাছ। নিয়মিত পানি দিয়েও গাছগুলো টিকিয়ে রাখতে পারছেন না কৃষকরা।

- Advertisement -google news follower

এসব এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলায় তীব্র রোদ। এতে চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা, বেগুন, করলা, টমেটো, শসা, মরিচ ও লাউয়ের মতো সবজি গাছগুলো শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কিছু কিছু গাছের পাতার রস একধরনের পোকা শুষে নেওয়ায় পাতা কুঁকড়ে গাছ মরে যাচ্ছে। আবার বেগুনে নলি পোকা ছিদ্র করে ঢুকছে। এসব রোগবালাই দমনে কীটনাশক ও পানি দিচ্ছেন চাষিরা। তবু কাজ হচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জের চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অধিকাংশ জমি আবাদ হয়েছে। ফলন আসার আগমুহূর্তে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। এতে ফলন উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। অধিকাংশ স্থানে গরমে বিবর্ণ হয়ে গেছে শাকসবজির গাছ। কিছু মরে গেছে। কমে গেছে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। আসছে না ফলন।

- Advertisement -islamibank

৪০ শতাংশ জমিতে করলা, জালি কুমড়া, লাউ ও বেগুন চাষ করেছেন নাহাপাড়া গ্রামের কৃষক বাবু মুন্সী। গত কয়েকদিন ধরে যে গরম পড়ছে, তা শাকসবজি গাছের জন্য সহনীয় নয় জানিয়ে এই কৃষক বলেন, ‘এই সময়ে সবগুলো গাছে ফলন থাকার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় কোনও গাছ বড় হয়নি। উল্টো রোদে পুড়ে করলা, জালি কুমড়া ও বেগুন গাছ মরে যাচ্ছে। বেশিরভাগ গাছই শুকিয়ে গেছে। পানি দিচ্ছি নিয়মিত, কিন্তু সকালে পানি দিলে দুপুরের আগেই শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি না হলে কোনও গাছই বাঁচবে না।’

২৫ শতাংশ জমিতে চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা ও করলা আবাদ করেছেন একই এলাকার কৃষক মো. জুনায়েদ হোসেন। তীব্র রোদে গাছগুলো পুড়ে যাচ্ছে জানিয়ে জুনায়েদ বলেন, ‘এ বছর এমনিতেই চাষাবাদের খরচ বেশি। সার ও কীটনাশক বেশি দিতে হয়েছে। এখন ফলন ধরার সময়ে এসে গরমে বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা ও করলাসহ বিভিন্ন সবজি গাছ। সবগুলো গাছ মরে গেলে লোকসান গুনতে হবে।’

আমার জীবনে এত গরম দেখিনি জানিয়ে সুখবাসপুর এলাকার কৃষক শাহজাহান ঢালী বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে টমেটো, শসা ও মরিচ চাষ করেছি। রোদে গাছগুলো পুড়ে যাচ্ছে। আশপাশের পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। দূরের এক জায়গা থেকে পানি এনে ক্ষেতে দিচ্ছি। কিন্তু গাছগুলো প্রতিদিনই মরে যাচ্ছে।’

৩৫ শতাংশ জমিতে জালি কুমড়া, ঝিঙা, করলা, লাউ ও ধুন্দল আবাদ করেছেন রতনপুর এলাকার রতন দাশ। তিনি বলেন, ‘রোদে সব ফসলের গাছ মরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকাল-বিকাল পানি দিচ্ছি। তারপরও গাছগুলা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। এই সময়ে একটু বৃষ্টি হলে গাছগুলো বেঁচে যেতো।’

জেলায় চলতি মৌসুমে চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানালেন মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শান্তনা রাণী। তিনি বলেন, ‘এখনও কিছু জমিতে আবাদ চলছে। তবে বর্তমানে যে দাবদাহ চলছে, তাতে শাকসবজির গাছগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবজির ক্ষেত। অতিরিক্ত গরমে কিছু কিছু গাছ মারা যাচ্ছে। আবার গাছগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ তীব্র তাপপ্রবাহ।’

করণীয় কী?

এক্ষেত্রে করণীয় কী জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এক্ষেত্রে অবশ্যই মাটির ধরন বা রসের অবস্থা বুঝে ক্ষেতে সেচ দিতে হবে। মালচিং পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো। ক্ষেতের আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। কারণ এতে ক্ষেতের পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে উড়ে যায় না। জমিতে রসের ঘাটতি হয় না। সেচ লাগে কম। মালচিং ব্যবহারে ২৫ ভাগ পর্যন্ত আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব। যারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেননি, তাদের অবশ্যই সেচ দিতে হবে। তবে বেশি সেচ দেওয়া যাবে না। কারণ রোদে পানি গরম হয়ে গাছ মারা যেতে পারে।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM