কন্ট্রোল রুমের ভুলে মুখোমুখি ট্রেন, লোকোমাস্টারের ফোনকলে রক্ষা

অনলাইন ডেস্ক

ঈদযাত্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে আন্তঃনগর কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং আন্তঃনগর পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন। ফলে ভয়ংকর দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছেন হাজারো যাত্রী। দুর্ঘটনাটি ঘটলে ঈদের আগে লোকোমোটিভ দুটি থেকে শুরু করে আমদানি করা নতুন কোচের ব্যাপক ক্ষতি হতো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঈদযাত্রায় ট্রেন দুটি চালানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো বাংলাদেশ রেলওয়েকে।

- Advertisement -

এ ঘটনায় কন্ট্রোল রুমের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। তবে কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে ‘এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি’।

- Advertisement -google news follower

ঘটনাটি শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরের। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্মিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথটি ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইনের। গত বছর ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন এ রেলপথটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের প্রায় ৫ মাস হতে চললেও এ পথে এখনো বসানো হয়নি সিগন্যাল পোস্ট ও কিলোমিটার নির্দেশক পোস্ট।

ট্রেন দুটির লাইন ক্লিয়ারেন্স স্লিপ থেকে জানা গেছে, ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে নন-স্টপ আন্তঃনগর ট্রেন কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৩)। ৩০০১ নম্বর লোকোমোটিভটি ২২ কোচের কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। যাত্রাপথে চকরিয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার জন্য ট্রেনটিকে অনুমতি দেওয়া হয় দুপুর ১টা ২২ মিনিটে।

- Advertisement -islamibank

অন্যদিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম থেকে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে আসে নন-স্টপ আন্তঃনগর ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬)। ৩০১৩ নম্বর লোকোমোটিভটি ২০ কোচের পর্যটক এক্সপ্রেসকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। যাত্রাপথে লোহাগাড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে চকরিয়া রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার জন্য ট্রেনটিকে অনুমতি দেওয়া হয় দুপুর ১টা ২০ মিনিটে।

রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্রটি জানিয়েছে, চট্টগ্রাম প্রান্তের লোহাগাড়া স্টেশন ও কক্সবাজার প্রান্তের চকরিয়া স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে হারবাং স্টেশনের অবস্থান। কিন্তু হারবাং স্টেশনের কার্যক্রম চালুর বিষয়ে আগাম কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি লোকোমাস্টার ও স্টেশন মাস্টারদের। ফলে লোহাগাড়া স্টেশন ও চকরিয়া স্টেশন মাস্টার লোহাগাড়া-চকরিয়া ও চকরিয়া-লোহাগাড়া রেলপথে লাইন ক্লিয়ার দেন।

সূত্রটি আরও জানায়, লাইন ক্লিয়ার পেয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস যখন ১টা ৩০ মিনিটে চকরিয়া স্টেশন ছেড়ে আসে তখন এই ট্রেনের লোকোমাস্টার যোগাযোগ করেন পর্যটক এক্সপ্রেসের লোকমাস্টারের সঙ্গে। ওই ট্রেনও তখন লোহাগাড়া স্টেশন ছেড়ে এসেছে। গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেন দুটির ক্রসিং হতো লোহাগাড়া স্টেশনে। যোগাযোগের পর জানতে পারেন তারা দুজনেই ট্রেন চালাচ্ছেন একই লাইনে। তাহলে তাদের ক্রসিং হবে কোথায়? চলতে থাকলে তো মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে।

পরে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার যোগাযোগ করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোল রুমে। সেখানে জানতে চান, ৮১৩ ও ৮১৬ ট্রেন দুটির ক্রসিং হবে কোথায়। কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, তাদের ক্রসিং হবে লোহাগাড়া ও চকরিয়ার মধ্যবর্তী হারবাং স্টেশনে। তখন লোকোমাস্টার বলেন, এ বিষয়ে তো আমরা কিছুই জানি না। আমাদের তো লাইন ক্লিয়ার দেওয়া হয়েছে লোহাগাড়া-চকরিয়া ও চকরিয়া-লোহাগাড়া রেলপথে। আমি অলরেডি হারবাং স্টেশনের কাছে। পর্যটক এক্সপ্রেস তো হারবাং স্টেশনে এখনো আসেনি। তখন কন্ট্রোল থেকে তাকে স্টেশনের আউটার সিগনালের কাছে থামতে বলা হয়। পরে কক্সবাজার এক্সপ্রেস আউটারের কাছে মেইন লাইনে থামান লোকোমাস্টার।

সূত্রটি জানায়, এরপর পর্যটক এক্সপ্রেস এলে সেটিকে হারবাং স্টেশনের ১ নম্বর লুপ লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে পর্যটক এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার কক্সবাজার এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টারকে জানান। পরে হারবাং স্টেশনে কক্সবাজার এক্সপ্রেস এলে দুপুর ২টা ৩ মিনিটে লোহাগাড়া স্টেশনে যাওয়ার অনুমতি দেন হারবাং স্টেশনের মাস্টার। অথচ তাদের আগেই লোহাগাড়া-চকরিয়া ও চকরিয়া-লোহাগাড়া স্টেশনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারা যদি এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ না করে এগিয়ে যেতেন তাহলে ট্রেন দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ছিল অনিবার্য। আর তাতে লোকোমাস্টারদের ঘাড়েই সবার আগে দোষ আসত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, কন্ট্রোল রুম ও স্টেশন মাস্টারের ভুলে একই লাইনে দুই দিক থেকে দুটি ট্রেন চালিয়ে দেওয়ার ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে পারত। শুধু উভয় ট্রেনের ক্রুদের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুখোমুখি সংঘর্ষের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল রেলওয়ে। আজ কথায় কথায় লোকোমাস্টারদের এককভাবে দায়ী করে চাকরিচ্যুত করা হয়। একটি দুর্ঘটনা কখনো একজনের ভুলে সংঘটিত হয় না।

তিনি বলেন, ভৈরব দুর্ঘটনা, হাসানপুর দুর্ঘটনা, ফৌজদারহাট দুর্ঘটনাসহ আরও অনেক দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় না এনে শুধু ক্রুদের দায়ী করায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক এবং ক্রুদের পুরস্কৃত করা হোক।

মজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার রেলপথ একক লাইনের। এখানে কোনো সিগন্যাল পোস্ট নাই, কিলোমিটার পোস্ট নাই। কোন স্টেশন খোলা, কোন স্টেশনে ক্রসিং হবে তা ক্রুদের জানানো হয় না। এতদিন হয়ে গেলেও ক্রুদের বিশ্রামের জন্য রেস্ট হাউজে কোনো খাট দেওয়া হয়নি, ফ্লোরে ঘুমাতে হয়। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভিআইপি ট্রেন সার্ভিস।

এ বিষয়ে জানতে সকাল থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৪টা) বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম ও চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া মিলেনি।

তবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্রেন কন্ট্রোল রুমে কল করে বিষয়টি জানতে চাইলে বলা হয়, ‘আমরা এরকম একটা ঘটনা শুনেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM