শেষ কর্মদিবসে ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দিলেন চবি উপাচার্য

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দায়িত্বের শেষ দিনে অন্তত ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মজুরি কিংবা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বন্ধ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

- Advertisement -

তবে সদ্য সাবেক এ উপাচার্য ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে একের পর এক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। গত তিন মাসে অন্তত ১০৫ জন নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

- Advertisement -google news follower

ড. শিরীণ আখতারের শেষ কার্যদিবসে নিয়োগ পাওয়া এই ৩৭ জনের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি।

দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়োগের অফিস আদেশ যাচাই করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অফিস আদেশে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ সেলের প্রধান এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে জোরপূর্বক সই আদায় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের দু’জনকে হুমকি দিয়ে সই আদায় করেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

- Advertisement -islamibank

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস পিয়ন, বুক বাইন্ডার, কম্পিউটার ল্যাব সহকারী, ভোজনালয় সহকারী, সর্টার,ঊর্ধ্বতন সহকারী, উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, পেশ ইমাম, ঝাড়ুদার ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইত্যাদি পদে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১৫ জন আর চতুর্থ শ্রেণির ২২ জন। ছয় মাসের জন্য এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেতন ধরা হয়েছে দৈনিক সর্বনিম্ন ৩৩০ থেকে ৬৫০ টাকা।

নিয়োগ পাওয়া এই ৩৭ জনের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এদের মাঝে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ পাওয়া ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই ছয়জন হলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিমা আক্তার, সাবেক সহ-সভাপতি আবু বকর, ইবনুল নেওয়াজ, সাবেক সমাজ সেবাবিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সাদ্দাম, ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী নাঈম আজাদ ও বাদল কান্তি চাকমা।

এসব নিয়োগের বিষয়ে জানতে চেয়ে সদ্য সবেক উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

গত মঙ্গলবার অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে সরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। ১৯তম উপাচার্য হিসেবে বুধবার তিনি দায়িত্ব নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হলে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এরপর প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে মৌখিক অথবা ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হয়। পরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের আবেদন অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। সিন্ডিকেট নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। কিন্তু বিদায়ী উপাচার্যের শেষ দিনে এসব নিয়মনীতি মানা হয়নি।

সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতার উপাচার্য পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৯ সালের নভেম্বরে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেন ১৭২ জনকে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির ১১৫ আর চতুর্থ শ্রেণির ৫৭ জন। এর বাইরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩৬৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ১৩০ জন। অন্যরা কর্মচারী।

শেষ সময়ে উপাচার্যদের নিয়োগের তৎপরতা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালে ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তাঁর শেষ কর্মদিবসে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরে এসব নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি। অধ্যাপক শিরীণ আখতারের আগে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীও শেষ সময়ে এসে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁরা এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM