জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে হাই ভ্যালুএডেড পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার আইসিটি, উন্নত প্রযুক্তি, পণ্য ও সেবা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার চেষ্টা করছে।
বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং দেশে ঐসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বড় বড় ভারী শিল্পগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন-ট্যাক্স টু জিডিপি’র রেশিও বাড়ানোর লক্ষ্যে এনবিআরের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ২০২৪ সালে আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় ৩৭ লক্ষ যা ২০২০ সালে ছিল ২১ লক্ষ এবং ২০২৪ ভ্যাট রিটার্ন হয়েছে ৫ লক্ষ যা ২০২০ সালে ছিল মাত্র ২ লক্ষ।
তিনি আরো বলেন-করদায় যাতে একই ব্যক্তির উপর না বর্তায় এবং কর নেট বাড়ানোর জন্য ধীরে ধীরে কাজ করছে এনবিআর। যার প্রতিফলন গত ৪ বছরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাক্কালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় মিলিত হন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা।
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ’র সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন, পরিচালক এ. কে. এম. আক্তার হাসেন, অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, কক্সবাজার চেম্বার পরিচালক আবেদ এহসান সাগর, ফেনী চেম্বারের পরিচালক বিলাস চন্দ্র সাহা, বিএসআরএম’র এমডি আমীর আলী হুসেইন, টি.কে. গ্রুপের এডভাইজর জাফর আলম, লুব-রেফ’র এমডি মোহাম্মদ ইউসুফ, কনফিডেন্স সিমেন্ট’র এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)’র সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন’র সভাপতি মাহবুব রানা, বাংলাদেশ ফ্রোজন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী, স্থানীয় মালিকানাধীন সিগারেট উৎপাদনকারী এসোসিয়েশন’র আবদুল আউয়াল মোহন, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন’র সহ-সভাপতি মোঃ বেলাল, বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন’র সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম ট্যাক্স বার এসোসিয়েশন’র মোঃ আবু তাহের, প্রাইম মুভার ওনার্স এসোসিয়েশন’র চৌধুরী জাফর আলম।
সভায় এনবিআর’র পক্ষ থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স ও আয়কর বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদস্য (কাস্টমস নীতি) মোঃ মাসুদ সাদিক, ফার্স্ট সেক্রেটারী (ভ্যাট পলিসি) হাসমত আলী এবং সেকেন্ড সেক্রেটারী (কর নীতি) বাপন চন্দ্র দাস।
স্বাগত বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন-ট্যাক্স টু জিডিপি’র রেশিও বাড়ানো প্রয়োজন, তবে দ্রুত বাড়াতে গিয়ে রাজস্ব নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করার আগে বর্তমান সংকটময় অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা এর চাপ নিতে সক্ষম এবং প্রস্তুত কিনা তা বিবেচনা করে নির্দিষ্ট কর প্রদানকারীর উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে বরং করদাতার সংখ্যা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার জন্য একটি যথাযথ পরিকল্পনা করার আহবান জানান।
তিনি বলেন-করনীতির বিভিন্ন ধারার জটিলতার কারণে বেসরকারী কোম্পানীর ট্যাক্স ২৭.৫% নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে মোট করদায় সবধরণের ব্যবসার ক্ষেত্রেই ৪০- ৫০% এর ওপরে দাঁড়াচ্ছে।
মুদ্রানীতির সংকোচনের ফলে দেশে এমনিতেই বিনিয়োগ ব্যয়বহুল হয়েছে। তাই রাজস্ব নীতির প্রয়োগের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বর্তমান বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে।
তাই সরকারের অবকাঠামোগত ডেভেলপমেন্ট এর বিনিয়োগকে ফলপ্রসূ করতে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিনিয়োগবান্ধব রাজস্ব নীতি এবং পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আয়কর আইন ২০২৩ প্রণয়নকে যুগান্তরকারী উল্লেখ করে চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি নীতি প্রণয়ন ও উন্নয়নমূলক এবং জনস্বার্থে নিবেদিত চেম্বার/বাণিজ্য সংগঠন, দেশীয় ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন।
এছাড়া রপ্তানি নিরবচ্ছিন্ন করতে বন্দরে কাস্টমস’র এক্সপোর্ট স্ক্যানিং মেশিন সংযোজন এবং অফডকগুলোতেও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অন্যান্য বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী পণ্য মূল্যের কাস্টমস ভেল্যুয়েশন ও এসেসমেন্ট নিশ্চিত করা, ছোটখাট ও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির কারণে ২০০-৪০০% কাস্টমস জরিমানা আরোপ না করা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, অডিট সহজীকরণ, সর্বোচ্চ ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা, ভ্যাটের প্রথম আপীলের ক্ষেত্রেও দাবীকৃত করের উপর ২০% টাকা জমা দেয়ার নিয়ম প্রত্যাহার করা এবং দেশীয় উৎপাদনমুখী শিল্পকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা, চট্টগ্রাম কাস্টমস এর জনবল ও ল্যাব এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবী উত্থাপন করেন।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলমসহ অন্যান্য সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রামের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনারবৃন্দ, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), আবু সুফিয়ান চৌধুরী, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, ওমর মুক্তাদির, খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি কনজরী চৌধুরী, চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী, বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন, ফল ব্যবসায়ী সমিতি, বিপিজিএমইএ, রিহ্যাবসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জেএন/পিআর