মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ এখনো চলমান: বিভাগীয় কমিশনার

স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ ১৭ মার্চ শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেন।

- Advertisement -

সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অপর্র্ণ করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসি, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) একেএম সরোয়ার কামাল, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোঃ আবু সাইদ, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপি মোঃ সুলাইমান, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আজম, জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল কালাম, পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আর.আর.এফ কমান্ড্যান্ট (এসপি), সিআইডি, নৌ-পুলিশ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, আনসার-ভিডিপি, এলজিইডি, বিআরটিএ, খাদ্য বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকার-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান।

- Advertisement -google news follower

সকাল ১০টায় শিশুদের নিয়ে কেক কেটে ও বেলুন উড়িয়ে জাতির পিতার ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসিসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাগণ।

সকাল সোয়া ১০টা থেকে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

- Advertisement -islamibank

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তি শিল্পী এডভোকেট মিলি চৌধুরীর সঞ্চালনায় শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম. শফিউল্লাহ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল। অনুষ্ঠানে এতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিতে আয়োজিত চিত্রাংকন, হাতের লেখা, নৃত্য ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গানের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের তত্ত¡াবধানে ডিসি হিল, সিআরবি, টাইগারপাস মোড় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কিত ডকুমেন্টারী প্রদর্শন ও ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহ আলোকসজ্জাকরণ করা হয়। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সুবিধাজনক সময়ে মহানগরীর ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতা, পুষ্টি ও খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর বিভিন্ন পুস্তক ও ছবি প্রর্দশন করা হয় এবং বিভিন্ন মসজিদ ও ধর্মীয় উপসনালয়ে মিলাদ মাহফিল, দোয়া প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া সমাজসেবা কার্যালয় ও শিশু একাডেমিতে শিশু সদন, শিশু পরিবার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান এনডিসি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ এখনো চলমান। আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা দেশের উন্নতি সহ্য করতে পারছেনা। তারা বিভিন্ন সময় গুজব ছড়িয়ে হোক বা অন্যান্য অপকর্মের মধ্যে দিয়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য তৎপর হয়ে আছে। তাদের সফল হতে দেয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে বুকে ধারণ করে কঠোর হাতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শোষন থেকে মুক্তির আন্দোলনে ৩টি বিষয় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জাতীয় সংগীত, ৭ই মার্চের ভাষণ ও জয় বাংলা শ্লোগান। এই ৩টি বিষয় যুগে যুগে বাঙালির সকল উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণে আছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ এখানে মুক্তি কথাটির নানা অর্থ রয়েছে। এর একটি অর্থ হল অর্থনৈতিক মুক্তি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণে দেশের মুক্তিকামী মানুষ আন্দোলনের শক্তি, উৎসাহ খুজে পায় যা পরবর্তীতে দেশের আপামর জনগনকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক শাসন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান ও ৭০’র সাধারণ নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। শিকার হতে হয়েছে অমানসিক নির্যাতনের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে তিনি যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তাঁ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ঐতিহাসিক ভাষণের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

পাকিস্তানি শাসনামলের শোষণ ও লাঞ্চনা-বঞ্চনার ইতিহাস কিভাবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উজ্জীবিত বাঙালি বিজয়ের ইতিহাসে রূপান্তর করে তা তার বক্তৃতায় উঠে আসে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি আলোকপাত করেন ডিআইজি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত হয়ে দেশকে ভালোবাসার জন্য আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, জাতির জনকের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM