সাতকানিয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ইটভাটায় মাটি পাচার ও কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। সরকারি পাহাড় কেটে, বন ধ্বংস করে ও ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটার প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতকানিয়া-বাঁশখালী সীমান্তের এঁওচিয়া-চুড়ামনি এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোর চারদিকে রয়েছে সরকারি বনাঞ্চল। অসংখ্য পাহাড়-টিলা কেটেই গড়ে উঠেছে এই ইটভাটা। এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে পাশর্^বর্তী বনাঞ্চলের কাঠ। পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শতাধিক স্কেভেটর। প্রায় ২০-৩০ ফুট গভীর করে ফসলি জমির মাটি কেটে পাচার হচ্ছে ইটভাটায়। ভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বনাঞ্চলের গাছ মরে যাচ্ছে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে বন্যপ্রাণি বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এতে মানুষের জানমাল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
প্রতিবছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে ওঠায় সাতকানিয়ায় কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে, ঢালে বা তৎসংলগ্ন সমতলের অন্ততঃ আধ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অধিকাংশ ইটভাটা।
ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা আইন অনুযায়ী, ইটভাটা নির্মাণের জন্য কেবল অকৃষি জমি ব্যবহার করা যাবে। পরিবেশবান্ধব চিমনী স্থাপন ইটভাটা নির্মাণের পূর্বশর্ত। অথচ এখানকার অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরের পাশে। সরকারি নিয়ম ভঙ্গকারীদের বেলায় কারাদ- ও অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাসোহারার বিনিময়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। শতাধিক অবৈধ ইটভাটার মধ্যে কয়েকটিতে নামমাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও পরে আবার তাদের ম্যানেজ করে পুরোদমে কার্যক্রম চালাচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা।
উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে এঁওচিয়ার ছনখোলা-চুড়ামনি পাহাড়ি এলাকায় বনাঞ্চলের পাশে আছে ২০টিরও বেশি ইটভাটা। অবৈধভাবে এসব ভাটায় বনাঞ্চল উজাড় করে প্রতিদিন পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। মাটি কেটে নেওয়ার ফলে অনেকক্ষেত্রে পাহাড়-টিলার শেষ চিহ্নটুকুও মুছে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনপথ। কেরানিহাটের জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে ৮ থেকে ১০টি ইটভাটা। এক একটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে ১০ থেকে ১৫ একর কৃষিজমির উপর। ফসলি জমির মালিককে লোভ দেখিয়ে জমির টপসয়েলসহ গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় হ্রাস পাচ্ছে জমির উৎপাদন ক্ষমতা।
একজন কৃষিবিদ জানান, টপসয়েল হল জমির প্রাণ। টপসয়েল কেটে নিলে জমির উর্বরতা কিছু থাকে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার জয়নিউজকে বলেন, অবৈধ ইটভাটাগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছি। পরিবেশ বিনষ্টকারী ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতকানিয়া ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফরিদুল আলম জানান, আমরা জিগজাগ চিমনি ছাড়া কোনো ইটভাটাকে সমিতিতে অর্ন্তভুক্ত করিনি। যারা পাহাড়-টিলা কেটে ইটভাটা স্থাপন করেছে তারা দেশের শত্রু, পরিবেশের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিলে আমাদের আপত্তি নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জয়নিউজকে জানান, সম্প্রতি আমার হাতে অবৈধ ইটভাটা বিষয়ে তথ্য এসেছে। অচিরেই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
এর আগে অভিযান পরিচালনা করে ভেঙ্গে দেওয়া ইটভাটাগুলো পুনরায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কীভাবে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাহলে আমরা আবারো অভিযান পরিচালনা করব।
এঁওচিয়া ইউনিয়ন ব্রিকফিল্ড সমিতির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।