বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবজাতি ও বিশ্ব মানবতাকে বাঁচাতে হলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সব ধরনের যুদ্ধ ও সংঘাতকে কঠোরভাবে ‘না’ বলতে হবে। বিশ্বায়নের বিশ্বে এটা নিশ্চিতভাবেই সহজ।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘জি-২০ লিডার্স সামিট ২০২৩’-এ দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান জানান। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ আমাদের সবাইকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আবাস হিসেবে পৃথিবীকে গড়ে তোলার প্রেরণা যোগাবে।’’
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় নামিয়েছে এবং এই দুর্দশা চলছেই।
দেড় মাস ধরে আমরা ফিলিস্তিনে নির্দয় গণহত্যা দেখছি, যেখানে এরই মধ্যে হাজার হাজার নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন এবং দুঃখজনকভাবে পাঁচ হাজারেরও বেশি নিষ্পাপ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, যা বিশ্বকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আজকের সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা এক হয়ে এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি তুলুন।
একই সঙ্গে নির্মমতার শিকার ভুক্তভোগীদের কাছে যেন অবিলম্বে নির্বিঘ্নে মানবিক সহায়তা সরবরাহ হয়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৎ প্রতিবেশী-সুলভ সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও বিশ্বব্যাপী এর প্রসার একটি ভালো সূচনা হতে পারে।’
এ লক্ষ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতের চমৎকার সম্পর্কের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যা ‘প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশীরা অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমানা মীমাংসার মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছি।’
বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে, গত এক বছরের জি-২০ প্ল্যাটফর্মে আমাদের আন্তরিক আলোচনা, বিশেষ করে নেতাদের এই শীর্ষ সম্মেলন আমাদের মধ্যে উদ্দেশ্য ও দায়িত্ববোধের সঞ্চার করেছে। আমাদের বিশ্ব-পরিবারের সবার সুস্থতা নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই চেতনায় আমি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে এক মিলিয়নেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনে আপনাদের আন্তরিক সমর্থন চাই।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জি-২০ প্রেসিডেন্সির সফল পরিচালনার জন্য নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসূ হবে এবং এটি বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গত সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফলকে এগিয়ে নিতে বুধবার এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জি-২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা গ্লোবাল সাউথের প্রকৃত উদ্বেগ ও সমস্যাকে প্রতিফলিত করে।
আমি আনন্দিত যে, নেতারা নয়াদিল্লিতে নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোকে বিশেষ করে, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, প্রযুক্তি রূপান্তর, ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো ও নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত, উন্নয়নের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছেন, একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এটি অপরিহার্য।’
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও নারীর ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উল্লেখ করেন এ সময়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে জানান, যা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’-এর অনুরণন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য ২০০৬ সালে ২৫.১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৫.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়েছে।
জেএন/পিআর
