এক ডাকাতের এত অস্ত্র!

পাহাড়ে তার বসবাস। অস্ত্রের গুদামও সেখানে। জনপদে নেমে আসে সে শুধু ডাকাতি করতে। খুনের চুক্তি পেলে কয়েকদিন থাকে। খুন করে আবার চলে যায়। এই একজনের কাছেই আছে দশটি আগ্নেয়াস্ত্র। কিছু বিদেশি। কিছু দেশি। অস্ত্রগুলো সে ভাড়াও দেয়। বছরখানেক আগে একজনকে কেটে সাত টুকরো করেছিল সে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ভয়ংকর এই ডাকাত সর্দারের নাম সাইফুল ইসলাম।

তাকে ধরতে পুলিশকে শ্রম দিতে হয়েছে ছয় মাস। রাঙ্গুনিয়ার দুর্গম মোবারক টিলা পাহাড়ে ওঠানামা করে পুলিশ সদস্যদের ঝরাতে হয়েছে অনেক ঘাম। তবুও সে ধরা পড়ে না মাসের পর মাস। তাকে ধরতে এবার পুলিশ ফন্দি আঁটলো। তার কাছ থেকে কিনবে অস্ত্র। এজন্য তার সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু হলো। রাজি হলো সে। ক্রেতার ইচ্ছে অনুযায়ী দশটি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে বাছাই করে অস্ত্র বিক্রি করবে সাইফুল। দরদাম হবে ‘জিনিস’ দেখার পর।

- Advertisement -

এক ডাকাতের এত অস্ত্র! | 43318064 241667529841683 3138344654865432576 n

- Advertisement -google news follower

শুক্রবার (৫ অক্টোবর) বিকাল ৫টা। খবর এলো পাহাড় থেকে নামছে ডাকাত সর্দার সাইফুল ইসলাম। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ছক আঁকলেন। ৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে ভাগ করলেন সাত টিমে। অপারেশনে যাওয়ার আগে বাহিনীর পোশাক ছেড়ে সবাইকে পড়তে বললেন লুঙ্গি। সন্ধ্যার পর ছদ্মবেশে গিয়ে হাজির সবাই পাহাড়ের পাদদেশে। ঘিরে ফেলা হলো রাঙ্গুনিয়ার ‘ফরেরখীল’ বিল। অস্ত্রের ক্রেতা সেজে তার সাথে যোগাযোগ করছিল নিয়মিত একজন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে এল সাইফুলও। পুলিশের উপস্থিতি আঁচ করতে পারলো সে। তারপর বিলের ঝোঁপে লুকিয়ে পড়ে ডাকাত সর্দার সাইফুল। একপর্যায়ে তার উপস্থিতি সনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বিলের মধ্যে এক ঘণ্টা ধাওয়া করে পুলিশ তাকে আটক করে।

এএসপি রাঙ্গুনিয়া সার্কেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জয়নিউজকে জানান, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায় ২০১৬ সালে দায়ের হওয়া একটি ডাকাতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ডাকাত সর্দার সাইফুলের সন্ধান পায় পুলিশ। এরপর থেকে তাকে গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নামে। সে মূলত ভাড়াটে সন্ত্রাসী। ডাকাতিও করে। তার কাছে দশটি আগ্নেয়াস্ত্র থাকার তথ্য পুলিশকে বিচলিত করে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের তালিকায় উপর দিকের সন্ত্রাসী সাইফুল।
তিনি আরো জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালে তার নেতৃত্বে খুন হন উকিল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। তাকে সাইফুল ও তার সহযোগীরা সাত টুকরো করে হত্যা করে। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১ নম্বর আসামি সাইফুল। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইসভেস্টিগেশন তদন্ত করছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে খুন-ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে।

- Advertisement -islamibank

এএসপি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, তাকে যখন গ্রেফতার করা হয় সে তখনই বলে উঠে, আমার প্রাণ ভিক্ষা দেন। বিনিময়ে আমি দশটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেবো। পরে তার বাড়িতে গিয়ে দশটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। মূলত অস্ত্রগুলো থেকে কয়েকটি অস্ত্র আমরা কিনে নেব বলাতে সে বাড়িতে অস্ত্রগুলো এনে রেখেছিল। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে দুটি বিদেশি অত্যাধুনিক পিস্তল রয়েছে। এছাড়া তিনটি বন্দুক, তিনটি এলজি, দুইটি পাইপগান।

এছাড়া ২৭ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয় তার কাছ থেকে। তিনি আরো বলেন, এক ডাকাতের কাছে একসাথে এত আগ্নেয়াস্ত্র থাকার বিষয়টি ভয়ানক। সে নিয়মিত অস্ত্রগুলো বিভিন্ন অপরাধীদের ভাড়া দিত। তার আরো চার সঙ্গী রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

এদিকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে শনিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, রাঙ্গুনিয়া সার্কেল এএসপি’র নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল পুলিশ ঘরে তুলেছে। কারণ সাইফুলের কাছে একসঙ্গে দশটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, এ তথ্য আমাদের জন্য খুবই চিন্তার ছিল। নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে এ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের যে কেউ নাশকতার কাজে ব্যবহার করতে পারে।

তিনি বলেন, সাইফুল উকিল আহমেদকে কেটে সাত টুকরো করেছিল। দুর্গম পাহাড়ে তার আস্তানা হওয়ায় তাকে ধরতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

এক ডাকাতের এত অস্ত্র! | 43225096 240388163316909 1782634577160830976 n

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা, রাঙ্গুনিয়া সার্কেল এএসপি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জয়নিউজ/অভি/আরসি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM