ছোট ভাইয়ের প্রতারণার জালে প্রবাসী বড় ভাই

ছোট ভাই আবদুল মান্নানের প্রতারণার জালে ফেঁসে গেছেন প্রবাসী বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে করুণ এ কাহিনী শুনান জাহাঙ্গীর আলম। এসময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট ভাই নাসির উদ্দিনসহ স্ত্রী-সন্তানরা।

- Advertisement -

জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া গ্রামের মৃত সামছুল হকের ছেলে। মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। এরপর কিশোর বয়সেই তার ঘাড়ে এসে পড়ে ছোট তিন ভাই আবদুল মান্নান, দিদারুল আলম ও নাসির উদ্দিনের দায়িত্ব। সঙ্গে তাদের মা।

- Advertisement -google news follower

এরমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বাড়িঘর। সংসার সামলাতে কিশোর জাহাঙ্গীর ১৯৮৮ সালে ধারদেনা করে পাড়ি জমান কাতারে। মালিকের আস্থাভাজন হয়ে ওঠায় করে দেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় দেশে বেকার থাকা মেজো ভাই আবদুল মান্নানকে ১৯৯৪ সালে ড্রাইভিং ভিসা দিয়ে সে দেশে নিয়ে যান। কিন্তু সে নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় ১৯৯৬ সালে তাকে কাতার ছাড়তে বাধ্য করে তার নিয়োগকর্তা।

জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিয়োগকর্তা ১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে আমাকে একটি হার্ডওয়ারের দোকান করে দেন। এ ব্যবসা দ্রুত প্রসার ঘটলে জাহাঙ্গীর তার আরেক ভাই দিদারুল আলম এবং নাসিরকে নিয়ে যান। আর আবদুল মান্নানকে সন্দ্বীপে একটি কাপড়ের দোকান করে দেন। কিন্তু দুই বছর না যেতেই ওই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে। পরে ১৯৯৯ সালের দিকে মায়ের অনুরোধে বেকার আবদুল মান্নানকে আবারও কাতার নিয়ে নিজের ব্যবসায় নিয়োগ করি।

- Advertisement -islamibank

‘তিন ভাই মিলে ব্যবসা ভালোভাবে চালালেও মান্নান শুরু করে ঝামেলা। কাস্টমারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় অভিযোগ বাড়তে থাকে তার বিরুদ্ধে। পরে মান্নানকে ১০ লাখ টাকার মালামাল দিয়ে আলাদা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর দিদারকেও আলাদা করে দেওয়া হয়। অন্য ভাইয়েরা ব্যবসায় ভালো করলেও মান্নান প্রতিষ্ঠান টেকাতে পারেনি। এরইমধ্যে দেশে আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক লোন নিয়ে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহর হাউজিং এস্টেটে একটি বাড়ি কিনি। যৌথ পরিবার হওয়ায় মেইনটেইনের সুবিধার্থে প্রাথমিকভাবে বাড়িটি মেজো ভাই আবদুল মান্নান এবং সেজো ভাই দিদারুল আলমের নামে রেজিস্ট্রি করাই।’

একপর্যায়ে আবদুল মান্নান অপর দুই ভাইয়ের নামে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করে দিতে অস্বীকার করে। আলাদা হওয়ার পর জাহাঙ্গীর আলম ও তার ছোট ভাই নাসিরউদ্দিন বাড়ির অংশীদার দাবি করে। প্রথম দিকে দিদারুল আলম অংশীদারি বুঝে দিতে চাইলেও মান্নানের পাল্লায় পড়ে বিগড়ে যায় সেও। অন্যদিকে আমার ব্যাংক চেকও কৌশলে হাতিয়ে নেয় আবদুল মান্নান। ওই চেকে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করতে গেলে তা ডিজঅনার হয়।

এরপরই আমার বিরুদ্ধে মামলা করে আবদুল মান্নান। এছাড়া মোবারক ফরিদ নামে তার এক পাওনাদারকে ওই অ্যাকাউন্টের ২১ লাখ টাকার চেক দেয়, সেটিও ডিজঅনার হয়। কিন্তু পাওনাদার যখন বুঝতে পারেন যে একাউন্টটি আবদুল মান্নানের নয় বরং তার ভাইয়ের, তখন তিনি মামলা করা থেকে বিরত থাকেন। আবদুল মান্নানের এই প্রতারণার ব্যাপারে তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন।

অন্যদিকে ২০১৭ সালে নিজের ব্যাংক চেকবই হারিয়ে যাওয়ায় হালিশহর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি আমি। ওই মামলার প্রাথমিক তদন্তে চেকবইটি আবদুল মান্নানের কাছে আছে এবং ওই চেকে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আমাকে হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একইসঙ্গে মোবারক ফরিদকে যে চেক দেওয়া হয়েছিল তাতেও আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাইদেরকে মানুষ করতে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছি। কাতারে ব্যবসায় উন্নতি করায় ভাইদেরকে অংশীদার করেছি। নিজের নামে লোন করে সরল বিশ্বাসে দুই ভাইয়ের নামে বাড়ি কিনেছি। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমাকে পথে বসিয়েছে। বাড়ির অংশীদার থেকে বঞ্চিত করেছে। আমি যেন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে না পারি সেজন্য চেকবই হাতিয়ে নিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মেজো ভাই আবদুল মান্নান আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

তিনি বলেন, বিদেশে থাকতে না পারায় দেশেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়েছি। কিন্তু সে আমার এতো বড় সর্বনাশ করবে তা ভাবতে পারিনি। বর্তমানে এই মামলা সামলাতে আমি হিমশিম খাচ্ছি। আমার প্রতিষ্ঠানে যে ৩০-৩৫ জন বাংলাদেশি কর্মী আছে তারাও সংকটে পড়েছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে।

এদিকে আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে দোহার বাংলাদেশ দূতাবাসে অভিযোগ করেছেন সে দেশের নিয়োগকর্তা নাসের বিন আবদুল্লাহ সালেহ আল হুমাইদি। অভিযোগে তিনি অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেছেন, আবদুল মান্নান ৩ কোটি টাকা (১৩ লাখ কাতারি রিয়াল) নিয়ে দেশে পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবদুল মান্নানকে কাতারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেও দূতাবাসের প্রতি আর্জি জানিয়েছেন ওই নিয়োগকর্তা।

জয়নিউজ/এসআই
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM