নগর ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১১২ নেতার অনাস্থা

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে একই কমিটির ১১২ জন। এতে সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের নেতাকর্মী রয়েছে।

- Advertisement -

এ নিয়ে নগর ছাত্রলীগের কমিটির বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছেন সবাই। ইতোমধ্যে রাতের আঁধারে, একপেশি ও বিতর্কিতদের নিয়ে সদ্যঘোষিত নগরের দুই থানা কমিটি বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম নগর। সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সবাই।

- Advertisement -google news follower

ঘোষিত দুই থানা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরও বন্দর, পতেঙ্গা, আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছিল একপেশিভাবে। সেখানেও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের।

- Advertisement -islamibank

অনাস্থা জ্ঞাপনকারী সহসভাপতি ফারুক ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, ‘নগর কমিটির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত। তারা কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে বা সম্মেলন না করে ফেসবুকের মাধ্যমে ছাত্রলীগের দুই থানার কমিটি দিয়েছে। যা খুবই লজ্জাজনক এবং এটি আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। আমরা নগর কমিটির অনেকে জরুরি সভা করে সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছি।

ফারুক আরও বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি। কালকে (৮ ফেব্রুযারি) সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বা পাল্টা কমিটি দেওয়া হবে।

শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অনাস্থা জ্ঞাপনকারী নেতৃবৃন্দরা হলেন, নগর কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. তালেব আলী, সহসভাপতি ফারুক ইসলাম, আবদুল খালেক, একরামুল হক রাসেল, মো. জয়নাল উদ্দীন জাহেদ, মইনুল হাসান চৌধুরী শিমুল, শাহীন মোল্লা, সৌমেন বড়ুয়া, আমজাদ হোসেন, দিদারুল আলম, শহিদুল ইসলাম শহীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রিয়াজুল করিম বিলাস, সুজন বর্মণ, অমিতাভ চৌধুরী বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফানুল আলম জিকু, খোরশেদ আলম, সাইফুল ইসলাম, শিক্ষা ও পাঠচক্র কবির আহমদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন জেবিন, অর্থ সম্পাদক হাসানুল আলম চৌধুরী সবুজ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আরিফুর ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান কিরণ, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আবুল মনসুর টিটু, গণশিক্ষা সম্পাদক ওসমান গনি বাপ্পী, ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক মিন্টু কুমার দে, সাহিত্য সম্পাদক হাসিব হাসান, স্কুল ছাত্র সম্পাদক মিয়া মো. জুলফিকার, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক ফয়সাল বিন নিজাম, উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক সাজ্জাদ আলী, উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রাসেল উদ্দীন তালুকদার, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ বিন ফয়সাল, উপ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক শেখ শরফুদ্দীন সৌরভ, উপ সমাজসেবা সম্পাদক এসইউ জোবায়ের, উপ ক্রীড়া সম্পাদক আবদুল আল মামুন, উপ-পরিবেশ সম্পাদক, তুষার চন্দ্র ধর, উপ ধর্ম সম্পাদক এমআর হৃদয়, উপ যোগাযোগ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, উপ নাট্য সম্পাদক মনির আলম, সহ-সম্পাদক সাব্বির সাকির, আবদুল্লাহ আল মামুন, জাকারিয়া হাবিব জাবির, সদস্য আনিসুর রহমান মুন্না, ইমাম উদ্দীন, ফাহাদ আসিফ, মমশাদ হোসেন রাব্বী ও আসিফ খান আরাফাত।

এছাড়া এর আগে আরো ৬৬জন নেতাকর্মী কমিটিকে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সম্পাদককে বিষয়টি অবহিত করেন। এরমধ্যে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের নেতারা রয়েছে।

অনাস্থার বিষয়ে নগর কমিটির সহসভাপতি মো. শাকিল জয়নিউজকে বলেন, ‘নগর কমিটি অনেক আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু কমিটির সম্মেলন না করে বিতর্কিত কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বর্তমান সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনের মাধ্যমে সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি গঠন করা হলেও এসব সমস্যা হতো না।
২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ২৪ জনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সংসদ। এর প্রায় একবছর পর ২০১৪ সালে ২৯১ জনের সম্মেলনবিহীন কমিটি পেয়েছিল নগর ছাত্রলীগ।

জানা গেছে, বর্তমান নগর কমিটির ৫৬ জন সদস্যই বিবাহিত। দেড়শরও বেশি নেতার বয়স সংগঠনের নিয়মসিদ্ধ নয়। ছাত্রনেতাদের অনেকেই ব্যবসায়ী। বেশ কয়েকজন নেতা পড়ালেখা ছেড়েছেন অনেকদিন আগে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বরাবর বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ দিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

এছাড়া বর্তমান কমিটি নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করছে না।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরের চান্দগাঁও ও ডবলুমরিং থানা কমিটি ঘোষণা করেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

অভিযোগ রয়েছে, চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলমের ভাই মোহরা ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। সহসভাপতি নয়ন উদ্দিনের অবৈধ অস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
অন্যদিকে, ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। যার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

কমিটি নিয়ে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামে। নগরের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তারা। এছাড়া টায়ার জ্বালিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেতাকর্মীরা।

জয়নিউজ/বিআর
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM