মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আর চেতনা ধারণ করার মধ্যে পার্থক্য আছে: মেয়র নাছির

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, দেশে একটি দল দাবি করে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার মধ্যে পার্থক্য আছে। মূলত চেতনাকেই ধারণ করতে হবে।

- Advertisement -

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) চট্টগ্রাম অফিসের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে ‘বিজয়ের শেষ ৩ দিন, কেমন ছিল চট্টগ্রাম’শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

- Advertisement -google news follower

তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আছেন যারা ’৭১ এর পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের অনেকেই আছেন যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার জন্য হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করবেন। কিন্তু তারা তো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।

মেয়র বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই শুধু তারা হত্যা করেনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করাটাই ছিল তাদের ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তারা ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে দেয়নি। উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা দেশটাকে পাকিস্তানের ভাবধারায় পরিচালিত করেছে। বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। অভিন্ন পাকিস্তান থেকে অহেতুক দেশটাকে স্বাধীন করা হয়েছে এমন একটি ধারণা তারা মানুষের মধ্যে তৈরি করার চেষ্টা করেছিল।

- Advertisement -islamibank

মেয়র নাছির বলেন, আমরা অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছি, যারা হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেছেন বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এঁদের অনেকে এখন জীবন সায়াহ্নে। স্বাধীন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের বীরত্বগাঁথা হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে। তাদের অবদানে এ দেশ পেয়েছি আমরা।

উপস্থিত বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনি জানলেন, শুনলেন কিন্তু আত্মস্থ করলেন না, অন্তরে ধারণ করলেন না তাহলে এই বুঝা ও জানাটা অর্থহীন হয়ে পড়বে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকরা বলেন, বিজয়ের শেষ ৩ দিন ছিল আতংক-ভয়, উৎসব-উচ্ছ্বাসের চট্টগ্রাম। পাশাপাশি ছিল ব্যাপক গুজবও। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকহানাদার বাহিনী পাগলা কুকুরের মতো আচরণ করে। এসময় তাদের রসদ গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা ঘরে ঘরে দোকানে দোকানে ঢুকে লুটতরাজ চালায়।

মুক্তিযোদ্ধা-গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ফৌজদারহাট, পতেঙ্গা, আমিন জুট মিল এলাকায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মতে একযোগে শতাধিক অপারেশন হয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর বন্দরের অয়েল ডিপোতে বিমান আক্রমণ হয়। আমি ভেবেছিলাম পাকবাহিনীর বিমান! তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিলই না। আফসোস করতাম, হাতে যদি একটি রাইফেল থাকতো গুলি করে বিমান ফেলে দিতাম। তখন আগ্রাবাদের একটি নালায় ঢুকে নাক উঁচু করে অবস্থান নেওয়ার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, নাকের পাশ দিয়েই তখন যাচ্ছিল মলমূত্রসহ আবর্জনা।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জানতেন যেকোনো সময় একটি বুলেট বিঁধতে পারে তাঁর বুকে। কিন্তু মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করেছি আমরা। জনগণও ভীত ছিল না। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন। খাবার দিতেন।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষ তিনদিন মিরসরাইয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ক্যাম্পে অবস্থান করি। এসময় শুনছিলাম প্রচুর মিলিটারি শহর অভিমুখে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও ভয় দুটোই ছিল। কারণ রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা, সিভিল মানুষ সবার হাতে অস্ত্র ছিল না। রাতে কিছু বাড়ি লুট হয়। রাজাকার আতাউস সোবহানের জল্লাদখানায় করুণ অবস্থা দেখেছি। চারদিকে মানুষের মাথার খুলি, রক্তের দাগ।

নগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে আমার মায়ের কথা বলতে হয়। তার চার সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। অথচ আমার মা লেখাপড়া জানতেন না। আফসোস মীর কাশিম আলীকে অল্পের জন্য ধরতে পারিনি।

মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মনজুরুল আলম মঞ্জু বলেন, আমি পদকের জন্য যুদ্ধ করিনি। দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধে যাই। পতাকার জন্য যুদ্ধ করি। অনেকের নামে স্কয়ার, সড়ক হচ্ছে। মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর নামে স্কয়ার করার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বলেন, এর কারণ মিত্রবাহিনীর সহায়তা, অবদান ভোলার নয়।

আলোচনায় অংশ নেন একাত্তরের ১১ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, মোহাম্মদ হারিছ, এবিএম খালেকুজ্জামান দাদুল, আবু সাঈদ সর্দার, জাহাঙ্গীর চৌধুরী সিইনসি, প্রফেসর মোহাম্মদ মইনউদ্দিন, ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু সিইনসি, রেজাউল করিম চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, মোজাফফর আহমদ ও মনজুরুল আলম মঞ্জু।

সঞ্চালনায় ছিলেন বাসসের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কলিম সরওয়ার। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ফুল তুলে দেন মেয়র। এসময় মেয়রের হাতে ফুল তুলে দেন বাসসের সাংবাদিকরা।

জয়নিউজ/বিআর
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM