বাতাসে ধুলো: কোথাও দ্বিগুণ, কোথাও ৯ গুণ!

নগরের বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কোনো কোনো স্থানে ধুলোর মাত্রা এতটাই, দূর থেকে তা কুয়াশা মনে হবে।

- Advertisement -

এদিকে দূষিত বাতাসে নগরে বাড়ছে রোগব্যাধি। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।

- Advertisement -google news follower

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধুলোর পরিমাণ দেড়শ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সহনীয়। কিন্তু নগরে ২০১৭ সালে তা ছিল গড়ে ২৩২ মাইক্রোগ্রাম। পরের বছর তা ২৭৩ মাইক্রোগ্রাম। আর চলতি বছর এটি পৌঁছেছে ৩৩০ মাইক্রোগ্রামে। দূষণের অন্যতম বড় উৎস উন্নয়নের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ল্যাব) মো. নূরউল্লাহ নূরী জয়নিউজকে বলেন, গত  ২৪ নভেম্বর পরিমাপ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধুলোর পরিমাণ আগ্রাবাদে ৩০৯ মাইক্রোগ্রাম, একে খান মোড়ে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের সামনে  ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। জামালখানের অবস্থা আরও ভয়াবহ, এখানে পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩৪০ মাইক্রোগ্রাম!

- Advertisement -islamibank

উন্নয়নের নামে বায়ুদূষণ করা যাবে না উল্লেখ্ করে  তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কাজের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়াসহ নিয়মিত পানি ছিটানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না সেবা সংস্থাগুলো।  সরকারি এবং বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোতেও পরিবেশের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় পরিবেশের সর্বনাশ ঘটছে। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি প্রকল্প গ্রহণের শুরুতেই বিবেচনায় নেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরের জামালখান, বহদ্দারহাট আরকান সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, টাইগারপাস সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নকাজ করছে সরকারি সেবা সংস্থাগুলো। উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে পুরো শহরই পরিণত হয়েছে ধুলোর নগরে। কন্ট্রাকটারদের দিনে তিনবার পানি ছিটানো কথা থাকলেও তারা এ নিয়ম মানছেন না।

জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর সেবা সংস্থাগুলোকে বায়ুদূষণে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এরপরও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান জয়নিউজকে  বলেন, উন্নয়নের নামে নগরে উড়ছে ধুলাবালি। সরকারি সেবা সংস্থাগুলো পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ না করায় তীব্র বায়ুদূষণে নাকাল নগরবাসী।

ঢাকার পর চট্টগ্রাম বায়ুদূষণে দ্বিতীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়কে মালামাল, ময়লার স্তূপ আর যানবাহনের ছোটাছুটিতে বাতাসে ধুলোবালির আধিক্য হুমকির মুখে ফেলেছে জনস্বাস্থ্যকে। যানবাহনের ধোঁয়ায় বিশুদ্ধ বাতাস হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত।

এদিকে বায়ুতে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর পিএম থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুবাহিত নতুন নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ঝুলন দাস শর্মা। তিনি জয়নিউজকে বলেন, বায়ুদূষণে নগরের প্রকৃতি ও পরিবেশ ভয়াবহ মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরনের ব্যাপকতর বায়ুদূষণ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অকাল মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে। নগরের বাতাসে বেশি মাত্রায় পিএম থাকার কারণে ধমনীতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রের রোগী বেড়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে বায়ুদূষণ আক্রান্ত শ্বাসতন্ত্রের রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু এবং ছাত্রছাত্রীরা বায়ুদূষণে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

উল্লেখ্য, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ যদি শূন্য থেকে ৫০ পিপিএমের মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়। এই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএমের মধ্যে থাকলে বাতাস ‘মধ্যম’ মানের। তবে ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএমের হলে বাতাস ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।

জয়নিউজ

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM