টিউশনির ফাঁদে টাকা লুটে উধাও!

‘ব্যবসার’ পথ তাদের সহজ। কিছু লিফলেট প্রিন্ট করা হয়। লেমিনেটিং করে টাঙানো হয় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। কেউ কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেন।

- Advertisement -

লিফলেট কিংবা পত্রিকার বিজ্ঞাপন, দুই জায়গাতেই থাকে প্রলোভন, দেওয়া হবে আকর্ষণীয় টিউশনি। সেই প্রলোভনের ফাঁদে পড়লেই হলো, টাকা খসবে নিশ্চিত।

- Advertisement -google news follower

নগরের সর্বত্র এখন টিউশন মিডিয়ার নামে জাল ছড়িয়ে আছে প্রতারণার ফাঁদ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের প্রয়োজন মেটাতে টিউশনি খোঁজেন অনেকেই। সেই প্রয়োজনের সুযোগটাই নেন প্রতারকরা। টিউশনি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগও আছে নগরের বেশ কয়েকটি টিউশন মিডিয়ার বিরুদ্ধে।

বাহারি বিজ্ঞাপন
নগরের প্রায় সর্বত্রই এখন টিউশন মিডিয়ার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বিজ্ঞাপন থাকে পত্রিকার পাতায়ও।

- Advertisement -islamibank

কী লেখা থাকে সেসব বিজ্ঞাপনে, জানতে চাইলে আশপাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোতে চোখ রাখলেই হলো।

‘আপনি কি টিউশনি খুঁজছেন?’ ‘শিক্ষক অথবা শিক্ষিকা আবশ্যক’ ‘লেডি টিউটর ওয়ান্টেড’, ‘আপনি কী গৃহশিক্ষক খুঁজছেন? তাহলে আজই রেজিস্ট্রেশন করুন’।

বড় অক্ষরে লেখা এমন শিরোনামের অসংখ্য লিফলেট চোখে পড়ে নগরের প্রায় সব এলাকাতেই। তবে অভিজাত এলাকাতেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় বেশি।

নগরের অলিগলিতে এভাবে প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

যেভাবে চলে টিউশন মিডিয়া
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের দিদার মার্কেট, জামালখান, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, কাজীর দেউরি, জিইসি মোড়, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, চকবাজার, হালিশহর, নিউমার্কেট এলাকায় দেখা মিলেছে বেশ কিছু টিউশন মিডিয়ার প্রচারপত্র।

এসব টিউশন মিডিয়ার মধ্যে আছে বেস্ট টিচার্স মিডিয়া, টিচার্স হেভেন, টিচার্স মিডিয়া, টিচার্স ব্যাংকিং মিডিয়া, টিচার্স একাডেমি, টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন, টিচার্স ফোরাম, টিচার্স ইউনিয়ন, টিচার্স ফেয়ার, টিচার্স ক্লাবসহ আরো অনেক টিউশন মিডিয়া।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব মিডিয়াতে টিউশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে প্রথমেই নিবন্ধন ফি’র নামে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়।

অনেকক্ষেত্রে টিউশনি দেওয়ার আগেই সম্মানির ৬০ থেকে ৭০ ভাগ টাকা নিয়ে নেয় টিউশন মিডিয়াগুলো।

টিউশন মিডিয়ার প্রতারণার শিকার হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তু বড়ুয়া জয়নিউজকে বলেন, বিজ্ঞাপন দেখে টিচার্স মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ৩০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করি। রেজিষ্ট্রেশন করার পর তারা টিউশনির জন্য একজন অভিভাবককে ফোন দেয়। তারপর মিডিয়ার কর্মকর্তাদের কাছে ওই অভিভাবকের ফোন নাম্বার চাইলে তারা ১৫০০ টাকা ফি ছাড়া নাম্বার দিতে রাজি হচ্ছিল না। পরে ১৩০০ টাকা দিয়ে নাম্বার নিই।

তিনি আরো বলেন, একদিন পড়ানোর পর ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমাকে ফোন করে জানায় তারা নাকি বাসায় টিচার রাখবে না, স্টুডেন্টকে স্কুলের টিচারের কাছে পড়াবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মিডিয়াকে জানালে তারা কিছু টাকা ফেরত দিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলে। কিন্তু এরপর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আজ, কাল, পরশু বলে অনেকবার ঘোরানোর পরও টাকা ফেরত দেয়নি।

এ ধরনের অপর একটি প্রতিষ্ঠান টিউশন মিডিয়া ডটকমের পরিচালক সাহেদকে জয়নিউজের পক্ষ থেকে গৃহশিক্ষক পরিচয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আপনাকে প্রথম মাসের বেতনের ৬০% টাকা আমাদের অগ্রিম দিয়ে দিতে হবে এবং সেটা টিউশন নিশ্চিত হওয়ার পর-পরই।

তিনি আরো বলেন, টিউশনি কনফার্ম করার পর যদি আপনাকে অভিভাবকের পছন্দ না হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে পুরো টাকা দেওয়া না হলেও, কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

জামালখান এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমেনা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, আমার মেয়ের জন্য টিচার্স ক্লাব নামে একটি মিডিয়া থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র বলে একজন শিক্ষক ঠিক করে দেওয়া হয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, ওই শিক্ষক চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র!

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী এবং প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন জয়নিউজকে বলেন, টিউশন মিডিয়ার নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অমানবিক। এক্ষেত্রে গৃহশিক্ষক এবং অভিভাবকদের সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সচেতন না হওয়ার কারণে কিছু ব্যবসায়ী শিক্ষকতাকে ব্যবসায়ে রুপান্তর করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

জয়নিউজ/জুলফিকার
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM