দর্জিপাড়ায় ঘুম নেই

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নগরের দর্জিপাড়া। প্রতিবারের মতো এবারও রোজার আগে থেকেই অর্ডার আসা শুরু হয়। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অর্ডারের সংখ্যা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতার পছন্দের পোশাক ডেলিভারি দিতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে অনেক কারিগরকে।

- Advertisement -

নগরের বিভিন্ন দর্জি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। সেলাই মেশিনের শব্দে কারিগরদের সঙ্গে কথা বলাও দায় হয়ে পড়েছে! বছরের এই সময়টা তাদের কাছে কিছু বাড়তি কাজ করে উপরি আয়ের ভালো সুযোগ।

- Advertisement -google news follower

ঈদে ক্রেতাদের রেডিমেডের চেয়ে ঝোঁক বেশি থাকে সেলাই করা কাপড়ের দিকে। তাই থানকাপড় বিক্রি হচ্ছে ভালোই। নগরের প্রায় সবক’টি মার্কেটে চলছে থানকাপড় বিক্রির ধুম। গজ হিসেবে মানুষ কিনছেন কাপড়। তারপর কেটেছেঁটে সেই কাপড় গায়ের মাপে আনতে সবাই ছুটছেন দর্জিবাড়িতে। ছেলেরা দিচ্ছেন পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট, প্যান্টের অর্ডার আর মেয়েরা দিচ্ছেন থ্রিপিস, সালোয়ার, কামিজ, বোরকার অর্ডার।

নগরের খলিফাপট্টি ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেল রোজায় ঘেমে-নেয়ে ঈদের কাপড় তৈরি করছেন কারিগররা। এরমধ্যেই প্রায় সব দোকানি ঈদের অর্ডার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কথা বলে জানা গেল, তারা পালা করে সেলাই করেন। দিনের ২৪ ঘন্টাই চলছে সেলাই। রোজার শেষের দিকে চাপ বেশি থাকে, তাই তারা দশ-বারো রোজার পর আর কাপড়ের অর্ডার নেন না।

- Advertisement -islamibank

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী তামান্না হক জয়নিউজকে বলেন, ঈদের দিন অবশ্যই স্পেশাল কিছু চাই। তাই এত আগে কাপড় সেলানোর জন্য এসেছি। পরে অর্ডার দিলে দর্জিরা তাড়াহুড়োর মধ্যে সেলাই করে। রেডিমেড কাপড়ে আপনি যেভাবে চান সেভাবে সব পাবেন না। তাই প্রতি বছর কাপড় সেলাই করি।

থানকাপড়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রি দেখা গেছে নগরের টেরিবাজারে। সেখানকার বিক্রেতা সেলিম জয়নিউজকে বলেন, ঈদ যত কাছে আসবে বিক্রিও তত বাড়বে। আমাদের দোকানে মান ভেদে ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দামে প্রতি গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও নগরের গুলজার টাওয়ার, মতি কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, লাকি প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিডিএ মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, হকার মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে চলছে থানকাপড় বিক্রির ধুম। এসব মার্কেটের আশেপাশেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী-অস্থায়ী দর্জি দোকান।

মার্কেটকেন্দ্রীক দর্জিপাড়া ছাড়াও কাপড় সেলাইয়ের ধুম চলছে নগরের অলি-গলির সব দর্জি দোকানেও। দেওয়ানবাজারের বিউটি টেইলার্সের দর্জি মো. শামীম জয়নিউজকে বলেন, এখানে যারা সেলাই করেন তারা আমার নিয়মিত ক্রেতা। তাদের কাপড়ের অর্ডার নিয়েই সামলে উঠতে পারছি না। বাইরের অনেককে তাই ফেরত দিতে হচ্ছে। দুজন অতিরিক্ত কর্মচারী রেখেও কাজের চাপ সামলানো কঠিন হচ্ছে। ডিজাইন ভেদে এক এক পণ্যের দাম ভিন্ন ভিন্ন হয় বলে তিনি জানান।

হকার মার্কেটের দর্জি মো. সিফাত-উল-ইসলাম জয়নিউজ বলেন, আমাদের এখানে প্রতিটি গলিতেই ৫ থেকে ১০ জন করে দর্জি আছেন। এখানে ছেলেদের কাপড় বেশি সেলাই হয়। নতুন কাপড় সেলাই ছাড়াও এখানে পুরনো কাপড় কাটা হয়।

মুরাদপুরের বাসিন্দা গৃহিণী সালমা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, শবে বরাতের শুরুতেই কাপড় সেলাই করে ফেললে চাপ থাকে না। পরে কাপড়ের দোকান ও দর্জির দোকানে ভিড় হয় বেশি। এবার একটা সালোয়ার, একটা গাউন ও দুটি কামিজ সেলাই করাচ্ছি।

পাঁচলাইশ মোড়ের অথৈ ফ্যাশনের মালিক রণধীর ভৌমিক জয়নিজকে বলেন, এবার গাউনের অর্ডার আসছে বেশি। প্রতিটি গাউন সেলানোয় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। এছাড়া কামিজ ৪০০ টাকা করে আর ছেলেদের শার্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ পড়ে। এছাড়াও অনেকে জামদানি শাড়ির উপর কাজ করান। কেউ কেউ কাপড়ে বিভিন্ন রকমের কুচি ও লেস বসান।

গুলজার টাওয়ারের মহিলা দর্জি সুলতানা বেগম জয়নিউজকে বলেন, সেলাই শেখা আছে তাই এ মাসে ঘরে বসে না থেকে টেইলার্সে কাজ নিলাম। মেয়েদের বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড় সেলাই করছি। গরম পড়ায় মেয়েরা এবারের ঈদের জামা বানাচ্ছে থ্রি-কোয়ার্টার হাতায়। ঈদের আগে অর্ডার দিতে হবে বলে কাজের অনেক চাপ।

ঈদের দিন ছেলেরা পাঞ্জাবি বেশি পড়েন। তাই দর্জি দোকানে ছেলেরা ভিড় করছেন পাঞ্জাবি সেলাতে। অনেকে আবার পাঞ্জাবি-শার্টের উপর এমব্রয়ডারির কাজ করছেন। আলাদা করে লাগাচ্ছেন গলা আর হাতা। সেলাইয়ের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি প্রতি মজুরি নেওয়া হচ্ছে তিনশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।

দাম যাই হোক, সবার ইচ্ছে ঈদের উৎসবে সেরা পোশাকই উঠবে তাদের গায়ে। এমন তাড়নাই তারা দিচ্ছেন দর্জিপাড়ায়।

জয়নিউজ/জুলফিকার
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM