বাবা ফজলে করিমের ‘মন্ত্রিত্ব’ নিয়ে কি বললেন ছেলে ফারাজ

রাউজানের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর সন্তান ফারাজ করিম চৌধুরী। বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় নতুনত্ব নিয়ে এসে ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। মাল্টিমিডিয়া ভিডিওগ্রাফি ও ফেসবুককে হাতিয়ার করে বাবার নৌকার বৈঠা ধরেছেন ছেলে ফারাজ। বিপুল ভোটে নৌকার কাণ্ডারি ফজলে করিমকে জিতিয়ে আনার পর মাঝি ফারাজ এবার বৈঠা বাইছেন ভিন্ন গন্তব্যে। ফজলে করিমকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়া পুত্র ফারাজ ফেসবুকে লিখেছেন- “বাঘ ধরলে ছাড়ে, ফজলে করিম ধরলে ছাড়ে না“। ফেসবুকে ঝড় তোলা লেখাটির চুম্বকাংশ জয়নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘’আমি ফারাজ করিম চৌধুরী আজ প্রথমবারের মতো এই বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সামনে কিছু কথা বলার প্রয়াস পাচ্ছি। ২০০৮ সালে আমার বাবা যখন দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন আমার বাবাকে মন্ত্রী করার দাবী উঠেছিল। ২০১৪ সালেও উঠেছিল একই দাবী। কিন্তু আমি এই বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করি নি। আজ সময় এসেছে, তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে হচ্ছে। আমার বাবা এবার মন্ত্রী হবেন নাকি হবেন না এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। কারণ তার হাত ধরেই আমার বাবা রাজনীতিতে এসেছিলেন। নেত্রী যদি ভালো মনে করেন তবে বাবা মন্ত্রী হবেন, অন্য কোন দায়িত্ব দিলে তাও সুন্দরভাবে পালন করবেন। কোন দায়িত্ব না দিলেও হাসিমুখে মেনে নিবেন। মাননীয় নেত্রীর সিদ্ধান্ত সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। তা সকলকে সম্মানের সাথে দেখার জন্য আহবান জানাচ্ছি।‘’

- Advertisement -

বাবা ফজলে করিমের 'মন্ত্রিত্ব' নিয়ে কি বললেন ছেলে ফারাজ

- Advertisement -google news follower

সংসদ সদস্য ফজলে করিমের সময়জ্ঞান নিয়ে তিনি লিখেন- ‘‘আমার বাবার একটি অভ্যাস আছে। এই অভ্যাসটি সত্যি কিনা তা কমেন্টের মাধ্যমে আমার রাউজানবাসী সাক্ষী দিবে। তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন ‘সময়’ কে। সকাল ৯ টায় যদি কোন অনুষ্ঠান থাকে তবে আমার বাবা রাউজানে গিয়ে পৌছান সকাল ৭টায়। ঠিক তেমনি যদি বিমানের কোন ফ্লাইট থাকে, তবে নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক ঘন্টা আগেই তিনি এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকেন। অথচ দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তিনি নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত না থাকলেও পারেন। এয়ারপোর্টে আগেভাগে উপস্থিত হওয়ার কারণে বাবার সাথে অনেকের দেখা-সাক্ষাত হয়। দেশের সামগ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করতে ভালবাসেন তিনি। তবে চট্টগ্রামের কাউকে দেখলে বাবার কথাবার্তার ধরণ পরিবর্তন হয়ে যায়। কেমন জানি বড় বড় চোখ করে চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। ঈদের খুশির মতো একটি পরিবেশ তৈরী হয়। বাবাকে যতবার দেখেছি চট্টগ্রামের কারো সাথে আলাপ করতে, ততবার একটি কথা শুনেছি। “আমরা রাজনীতিবিদরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের যথাযথ উন্নয়ন করতে পারি নি।”

জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ফজলে করিমকে নিয়ে পুত্রের এই লেখার প্রতিক্রিয়ায় রাউজানের অধিবাসী রাউজান হার্ডওয়ারের সত্ত্বাধিকারী ও ফজলে করিমের নির্বাচনী প্রচারণার নিয়মিত মুখ, উত্তর চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রনেতা কাঞ্চন তালুকদার জয় নিউজকে বলেন, ফজলে করিম সাহেব চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র এমপি, যিনি পর পর চারবারের নির্বাচিত। চৌধুরী সাহেবকে এবার মন্ত্রী হিসাবে পেতে চাই আমরা। তাঁর কর্মদক্ষতা, বিচক্ষণতা ও আন্তরিকতার মাপকাঠিতে তিনি মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য বলে মনে করি। এক সময়ের সন্ত্রাসের জনপদ খ্যাত রাউজান ও নগরীর সিআরবিকে তিনি শান্তি ও উন্নয়নের জনপদে পরিণত করেছেন। সন্ধ্যা নামলেই যেখানে মানুষ শংকিত থাকতো সেখানে পুরো জনপদ পরিণত হয়েছে শান্তির গোলাপি মডেল। ফজলে করিমের সার্বক্ষণিক চিন্তা-চেতনায় রয়েছে চট্টগ্রামের উন্নয়ন। তাই চট্টগ্রামের জনগণের প্রত্যাশা তাঁকে মন্ত্রী করা হলে চট্টগ্রামের চলমান উন্নয়ন আরো গতিশীল হবে।

- Advertisement -islamibank

বাবা ফজলে করিমের 'মন্ত্রিত্ব' নিয়ে কি বললেন ছেলে ফারাজ

কাঞ্চন তালুকদারের প্রত্যাশার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে ফারাজ করিমের লেখায়। পিতাকে নিয়ে লেখা প্রতিক্রিয়া ফারাজ করিম আরো বলেন- ‘এই কথাটি কিন্তু কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার মত নয়। চট্টগ্রামে কখনো দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের অভাব ছিল না। কখনো চিন্তা করে দেখেছেন, অন্যান্য বিভাগ (সম্মানের সাথেই বলছি) যেগুলো চট্টগ্রামের ধারেকাছে ছিল না তারাও কিন্তু এগিয়ে গিয়েছে উন্নয়নের দিকে। অথচ আমরা এখনো পড়ে আছি অনেক দূরে। জনাব চৌধুরীর একটা বিশাল গুণ আছে। সন্তান হিসেবে বলা ঠিক না তারপরেও বলছি। তিনি কিন্তু কখনো কাউকে দোষারোপ করেন না বরং নিজেরটা আগে স্বীকার করেন। কারো নাম উল্লেখ না করে আমার বাবা বলেন “আমরা ব্যর্থ হয়েছি”। তার মধ্যে দেশপ্রেমের কোন ঘাটতি নেই। সুতরাং এমন একটি মানুষকে জননেত্রী যে দায়িত্ব দিবেন তিনি সেটা সম্মান, আন্তরিকতা, স্বচ্ছতার সাথে পালন করে দেশের পরিবর্তনের অংশীদার হবেন। মন্ত্রী হলেও করবেন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হলেও করবেন। শুধু একজন সাংসদ হলেও করবেন। যেদিন আমার বাবা নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেদিন বাবা একটি কথা জনসম্মুখে বলেছিলেন, তা হল “আমি দিতে এসেছি, দিয়ে চলে যাবো”।

বাবা ফজলে করিমের 'মন্ত্রিত্ব' নিয়ে কি বললেন ছেলে ফারাজ

তাই আজকে আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, কেউ বাবাকে মন্ত্রী করার দাবী জানাবেন না। জননেত্রীর সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রাখুন। বরং এই দাবী জানান, যে বাবা যে পদে থাকুক না কেন, আরো মনোবল ও বিশ্বাস নিয়ে এবার রাউজানের সীমানা অতিক্রম করে বৃহত্তম চট্টগ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে সংসদে ফিরে যান। তবে হ্যাঁ, আর যদি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান, তাহলে অনেকের অসুবিধাও হবে। মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনেক রকমের লোক কাজ করে এবং যাদের কথা বলছি তারা নিশ্চয় বুঝে গেছে। কেন না চট্টগ্রামের মানুষের মুখে এই কথাটি প্রচলিত আছে “বাঘ ধরলে ছাড়ে, ফজলে করিম ধরলে ছাড়ে না”।

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM