রুহিতে কী কপাল পুড়বে ব্যারিস্টার আনিসের?

নারী নীতিমালা ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনের সময় হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য ছিল, তাদের কোনো রাজনৈতিক ‘খায়েস’ নেই। কিন্তু এ বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করেছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী।

- Advertisement -

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন থেকে সংসদ সদস্য হতে চান তিনি। শুধু তাই নয়; আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে চালাচ্ছেন তিনি ‘গোপন যোগাযোগ’। আসনটিতে আওয়ামী লীগ যদি হেফাজতকে ছাড় দেয় তাহলে কপাল পোড়ার শঙ্কা রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসের।

- Advertisement -google news follower

জানা গেছে, রোববার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসন থেকে নির্বাচন করতে একেবারেই নীরবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী। কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি ইসলামী ঐক্যজোটের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতিও তিনি।

আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া হাটহাজারী আসনে গত দুই নির্বাচনে সাংসদ হয়েছিলেন ব্যারিস্টার আনিস। যদি রুহিকেই আসনটি দিতে চায় আওয়ামী লীগ তবে ‘ম্যানেজ’ করতে হবে ব্যারিস্টার আনিসকে।

- Advertisement -islamibank

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সুনজরে আসতেও সক্ষম হয়েছেন রুহি। গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনার আয়োজন করে কওমি আলেমরা। এ বিশাল আয়োজনের নেপথ্যে হেফাজতের যে’কজন নেতার ভূমিকা রয়েছে তাদের অন্যতম মাওলানা রুহি। যদিও হেফাজত মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা এ সংবর্ধনায় অনুপস্থিত ছিলেন।  কওমি আলেমদের এ বিশাল জমায়েতের নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সামনে পরীক্ষিত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন রুহি। এসব মিলিয়ে হাটহাজারী আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার দাবি জোরালো করছেন রুহি।

এদিকে হাটহাজারীর রাজনীতি সচেতনদের মতে, এ আসনটিতে কওমীপন্থী ভোটারদের আধিপত্য বেশি। হেফাজতের বেশকিছু ‘ফিক্সড’ ভোটও রয়েছে এখানে। এমনকি স্বাধীনতার পর এ আসনে আওয়ামী লীগ একবারই জয়ী হয়েছিল। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এমএ ওয়াহাব ছিলেন ওই সময়ে নৌকার একমাত্র কাণ্ডারি। এরপর থেকে ধানের শীষের দখলে ছিল হাটহাজারী। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঝুঁকি নেয়নি চট্টগ্রাম জেলার প্রেস্টিজিয়াস এ আসনে। ছেড়ে দেয় জাতীয় পার্টিকে। ব্যারিস্টার আনিসকে একে একে দুইবার আসনটিতে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ।

এদিকে মহাজোটের উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগের পাশপাশি নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন রুহী। রোববার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রামের নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মিনার প্রতীক নিয়ে এ অঞ্চলের ভোটারদের রায় প্রত্যাশী তিনি।

এ ব্যাপারে মঈনুদ্দিন রুহী জয়নিউজকে বলেন, হাটহাজারীর সার্বিক উন্নয়নে আমি ভূমিকা রাখতে চাই। উন্নত, সমৃদ্ধ, মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে চাই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা কোনো জোট থেকে নির্বাচন করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নিজের দলীয় শক্তির উপর ভিত্তি করেই আমি মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। তবে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করায় কওমি আলেমদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া সংবর্ধনা আয়োজনে আমি সামনের সারির একজন।

রুহির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হেফাজতের আমীর আল্লামার শফির ছেলে ও হেফাজতের অন্যতম নীতি-নির্ধারক আনাছ মাদানি কোনো মন্তব্য করেননি।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশিরভাই জাতীয় পার্টিকে এ আসনে মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে সংসদ সদস্য এবং পূর্ণ মন্ত্রী হলেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর খোঁজ রাখেননি ব্যারিস্টার আনিস। এছাড়া হাটহাজারী আওয়ামী লীগে আছে একঝাঁক তরুণ ও প্রবীণ নেতা। জাতীয় পার্টি থেকে টানা সাংসদ হওয়ায় সরকার ও দলের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে হাটহাজারীর কেউ প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না। এতে কাঙ্খিত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাটহাজারী।

এ বিষয়ে হাটহাজারী আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নাজমুল আলম মনি জয়নিউজ বলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে কোনো প্রার্থী হাটহাজারী থেকে সর্বশেষ নির্বাচন করেছে ২০০১ সালে। এরপর গত ১৮ বছরে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের কেউ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেখেনি। দীর্ঘ দেড় যুগ কয়েকটি প্রজন্ম বাঙালির মুক্তির এ প্রতীককে ভোট দিতে পারেনি। এ শূন্যতা পূরণ করতে এ আসনে আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া জরুরি।

মনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়ে সাংসদ ও মন্ত্রী হলেও ব্যারিস্টার আনিস কখনো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন না।

এদিকে এ ব্যাপারে জানতে ব্যারিস্টার আনিসের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জয়নিউজ
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM