বুদ্ধিভিত্তিক জাতি গঠনে পুষ্টি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি বলেছেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সঠিক পরিমাণ ও সঠিক পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য খেতে না পারায় অপুষ্টির মূল কারণ। বুদ্ধিভিত্তিক জাতি গঠনে পুষ্টি পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের পুষ্টির বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ডিম, দুধ, ফলমূল, শাক-সব্জি ও ডাল জাতীয় শস্য গ্রহণের মাত্রা বাড়াতে হবে। আমরা পুষ্টিহীন কাউকে দেখতে চাই না। পুষ্টি বিষয়টি আমাদের আরও জানতে হবে।

- Advertisement -

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর জিইসি মোড়স্থ দি পেনিনসুলা হোটেলের ডালিয়া হলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভাগীয় বহুখাত ভিত্তিক রিসোর্স দলের (ডিএমআরটি) সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সভার আয়োজন করেন।

- Advertisement -google news follower

তিনি বলেন, একটি শিশু জন্মগ্রহণের সাথে সাথে মায়ের বুকের শাল দুধ দিতে হবে। শিশুর জন্মের দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাািশ পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। পুষ্টির অভাবে একজন শিশু প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। পুষ্টি নিয়ে সর্বত্র সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শিশুকে কিভাবে লালন পালন করতে হবে তা সবার আগে জানতে হবে মাকে। একজন প্রশিক্ষিত মা-ই পারে একটি শিশুকে সুন্দর করে লালন পালন করতে। আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, মাদক থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারণ আপনি যতই মাদক গ্রহণ করবেন, দিনশেষে ভুক্তভোগী হবে আপনার পরিবার। তাছাড়া কোনো পুষ্টি কাজে লাগবে না আপনি যদি মাদকসেবী হন। চট্টগ্রাম বিভিগের সার্বিক পুষ্টির চিত্র উন্নয়নে স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য সকল সরকারি বিভাগ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে একযোগে কাজ করার আহব্বান জানিয়ে এক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন বিভাগীয় কমিশনার।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালেই পুষ্টি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। এই লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালে গঠন করা হয় জাতীয় পুষ্টি পরিষদ। এমনকি ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদেও পুষ্টি বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। তাই বহুখাতভিত্তিক পুষ্টির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।

- Advertisement -islamibank

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুষ্টির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) ২২টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে, যেগুলো পুষ্টি কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি ও মনো-সামাজিক বিকাশের দিকে নজর দিতে হবে। এর মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কের সার্বিক গঠন নিশ্চিত করা যাবে। আমরা সরকারি-বেসরকারি খাতসহ সুশীল সমাজের সঙ্গে কাজ করছি যেন সব মানুষের খাদ্যব্যবস্থার মধ্যে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। এ জন্য আমরা ভোক্তার দিকেও নজর দিচ্ছি। কেননা, দুর্বল বা পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণহীন খাদ্যাভ্যাস কেবল ব্যক্তির সীমিত আয়ের কারণেই গড়ে ওঠে না। এ ব্যাপারে ব্যক্তির অজ্ঞানতা বা অসচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে সর্বত্র জনমত সৃষ্টি করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আজম বলেন, পুষ্টিবান জাতি গঠনে আমাদেরকে অনেক কাজ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে ভোক্তাদের এমনভাবে সমন্বয় ঘটাতে হবে যেন নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য সবার জন্য সুলভ করা যায়। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা গেলে পুষ্টিবান জাতি গঠন সম্ভব। দূষিত পানি বা দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা তৈরি করে।

বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আজম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সুমন বড়ুয়া।

সভার নির্ধারিত বিভিন্ন সেশনে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পুষ্টি পরিস্থিতি, চলমান পুষ্টির পরোক্ষ কার্যক্রম ও পলিসিসমূহ, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ ও দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫), বহুখাত ভিত্তিক পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন বিএনএনসি’র উপ-পরিচালক ডা. জেহান আখতার রানা, উপ-পরিচালক ডা. নুসরাত জাহান, উপ-পরিচালক ডা. হাসনিন জাহান ও নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ মোশতাক আহমদ।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয়) সরকার মোঃ লুৎফর রহমান, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালমা ফেরদৌস, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া প্রমূখ।

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের এডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ, খাদ্য অধিদপ্তর, সমাজসেবা, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ সভায় অংশ নেন।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM