মৃত থেকে জীবিত হলেন ২৭ ব্যক্তি, চেষ্টায় রয়েছে আরও ২০৩!

অনেক ভোগান্তির পর অবেশেষে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ষাটোর্ধ জয়গন বেগমসহ ২৭ জন ভুক্তভোগীর নাম মৃত তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে জীবিত করা হয়েছে।

- Advertisement -

সংশোধনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন আরও ২০৩ জন ভুক্তভোগীর নাম। এক সপ্তাহের মধ্যে এরাও পুনর্জীবন লাভ করবেন বলে জানানো হয়েছে।

- Advertisement -google news follower

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৮ আগস্টে তার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে ভোটার তথ্য হালনাগাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে মৃত দেখানো হয়। অথচ প্রায় ৯ বছর ধরে জীবিত রয়েছেন জয়গন বেগম। কাগজে-কলমে এই বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিটিকে মৃত দেখানো হলেও বাস্তবে তিনি জীবিত।

কাজকর্ম করছেন। সবার সঙ্গে মিশছেন। এ ছাড়া তাকে মৃত দেখানোর কারণে কয়েক বছর ধরে বিধবা ভাতা থেকে বঞ্চিত তিনি। এমন ভুলের জন্য তথ্য হালনাগাদকারীদের দায়ী করছেন স্বজনরা।

- Advertisement -islamibank

সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করার পর জয়গন বেগমসহ এমন ২৭ জন ভুক্তভোগীর নাম মৃত তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে জীবিত করা হয়েছে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাবিত্রী রানী অভিযোগ করেন, গত বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় তাকে মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে গিয়ে দেখেন ডাটাবেজে তাকে মৃত দেখাচ্ছে।

পরে নির্বাচন অফিসে গেলে তিনি যে জীবিত আছেন তার প্রমাণস্বরূপ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সনদপত্রসহ আবেদন করতে বলে। এরপর ধোপাকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন যে, ‘সাবিত্রী রানী মারা যাননি।

তিনি সশরীরে ইউপি অফিসে হাজিরা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে জীবিত রয়েছেন। অতএব মৃত্যু হওয়ার ভুল তথ্য সংশোধন করে তাকে হয়রানি থেকে মুক্ত করা হোক।

একইভাবে পৌরসভার গাংগাপাড়া গ্রামের আমান আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম, জোতবিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই দাসের ছেলে দীপক দাসসহ ২৭ জনকে মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় স্কুল-কলেজে সন্তানের ভর্তি, বয়স্ক ভাতার টাকা উঠানো, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়া এবং ব্যাংকের সেবা থেকে ৬ মাস বঞ্চিত ছিলেন। অনেকেই ভাতার টাকা বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তুলতে না পেরে চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন।

পরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে বিশেষ ফরমে আবেদন করে মৃত তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করতে সক্ষম হন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন জানান, বছর খানেক আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য দেড় শতাধিক মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন স্কুল শিক্ষক।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং মৃত ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করেন তারা। এদের প্রত্যেককে নিয়মাবলী শেখানো হয়। কিন্তু তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জীবিতদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের হয়রানির করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারি নিয়ম মোতাবেক মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই ছিলেন স্কুল শিক্ষক।

তাদেরকে সম্মানজনক সম্মানি, তথ্য হালনাগাতে প্রশিক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে তাদের কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন। কিন্তু তারা দায়িত্বে গাফিলতি করায় এমন ভুল করে জীবিত ব্যক্তিদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৭ জন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়। অথচ পরে জানতে পারি তারা জীবিত আছে। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে জীবিত করা হয়েছে।

এছাড়াও ২০২২ তথ্য হালনাগাদে আরও ২০৩ টি ডাটাবেইজের তথ্য ভুল রয়েছে। জীবিত ব্যক্তিরা মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের সঠিক ডাটাবেইজ খুঁজে বের করে জীবিত (সংশোধন) করার চেষ্টায় কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত তারা জীবিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

প্রতিদিনই মৃতের তালিকায় নাম উঠা ব্যক্তিরা ভোগান্তি নিয়ে অফিসে আসছেন। আর আমরা আইসিইউ থেকে সিরিয়ালি বের করে তা সংশোধন করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে এসব মাঠকর্মীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা করা হবে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM