বাড়ছে লাশের স্তূপ, অনেক পরিবারে নেই কাঁদার লোক!

মানুষ যখন পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুমে বিভোর, ঘড়িতে সময়ের কাটা তখন ভোর ৪টা। হঠাৎ ভয়াবহ আকারে কেঁপে ওঠে তুরস্ক এবং সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকা। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭.৮।

- Advertisement -

ভেঙে পড়েছে বহু বাড়িঘর। ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দু হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াতে পারে লাখ।

- Advertisement -google news follower

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে শুরু হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তি তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে।

প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন ও সাইপ্রাসও কেঁপে ওঠে সেই ভূমিকম্পে। ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়।

- Advertisement -islamibank

প্রবল ঝাঁকুনিতে বহু ভবন ধসে পড়ে, সেসব ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে খবর আসছে।

সকালের ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতেই তুরস্কে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। দুপুর ১টা ২৪ মিনিটের সময়ে দ্বিতীয় কম্পনটি অনুভূত হয় বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন।

দ্বিতীয় কম্পনটি সকালের কম্পনের আফটারশক নয় বলে জানিয়েছে দ্যা গার্ডিয়ান। খবরে বলা হয়, দ্বিতীয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্কের কাহরামানামারাস প্রদেশের এলবিস্তান শহরে। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এ ভূকম্পনে এখন পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি।

১৯৩৯ সালের পর তুরস্ক এমন ভয়াবহ ভূকম্প দেখেনি। দীর্ঘ ৮০ বছর আগে সমান শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প দেখেছিল তুরস্ক; সেবার মৃত্যু হয়েছিল ৩৩ হাজার মানুষের।

রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার যে ভূমিকম্প তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে, সেটিই ওই অঞ্চলের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে মত দিচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদদের কেউ কেউ।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূতত্ত্ববিদ স্টিভেন হিসকে জানিয়েছেন, ৮০ বছর আগে এর সমান শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প দেখেছিল তুরস্ক। তখনও উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক মৃতদেহ। কোনও কোনও পরিবারে সকল সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শোকপালন করবেন বলেও আত্মীয়-পরিজন নেই অনেকের।

ভেঙে পড়েছে বহু বাড়িঘর। ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও বহু মানুষ আটকে রয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বাহিনী। সাধারণ মানুষও এতে হাত লাগিয়েছেন।

এই ঘটনা তুরস্কবাসীদের ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পের স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে। সবাইকে একসঙ্গে এই বিপদ মোকাবেলা করবেন বলে বার্তা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

ভূমিকম্পের পর সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, কাহারামানমারাসে যে ভূমিকম্প হয়েছে এবং আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুভূত সকল নাগরিকদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আমাদের সকল প্রাসঙ্গিক ইউনিট এএফএডি এর পরিচালনায় উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানান, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমাদের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল প্রেরণ করা হয়েছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এএফএডি, গভর্নর এবং অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান দ্রুত কাজ শুরু করেছে।

এরদোয়ান বলেন, ভূমিকম্পের পর শুরু কাজগুলো আমরা সমন্বয় করছি। আমরা আশা করি যে আমরা যে দুর্যোগ সম্মুখীন হচ্ছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এবং সর্বনিম্ন ক্ষতির সঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠব। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

তুরস্কের কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, গাজিয়ানটেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, মালতায়া এবং আদানাসহ বিভিন্ন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সিরায়ার আলেপ্পো, হামা এবং লাত্তাকিয়াসহ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশ দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ২০২০ সালে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশটির এলাজিগ এলাকায়। সে ঘটনায় ৪১ জন নিহত এবং ১,৬০০ মানুষ আহত হয়েছিল।

সিরিয়ার ন্যাশনাল আর্থকোয়েক সেন্টারের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রায়ত্ত বেতারকে বলেছেন, ১৯৯৫ সালে আর্থকোয়েক সেন্টার চালু হওয়ার পর এত শক্তিশালী আর কোনো ভূমকম্প সেখানে রেকর্ড করা হয়নি। সুত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM