নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকিতে সমগ্র দেশ: আইইডিসিআর

0

দেশের কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের রোগী পাওয়া গেলেও সবকয়টি জেলাই এ ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

রোববার চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ও এতে মৃতের তথ্য জানিয়ে এ কথা বলেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।

তিনি বলেন, কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেলেও সবজেলাই ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতজন। যা গত চার বছরে সর্বোচ্চ। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন ১০ জন। যা গত আট বছরে সর্বোচ্চ।

আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা বেঁচে থাকেন, তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগেন।

তাহমিনা শিরিন বলেন, বিভিন্ন অনলাইন শপে এখন খেঁজুরের রস বিক্রি হচ্ছে। তারা প্রচার করছে, তারা সব ধরনের সতর্কতা মেনে রস সংগ্রহ করছে। রসের হাড়ি ঢেকে সেটা করা হয়েছে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, রসের হাড়ি ঢেকে সংগ্রহ করলেও সেখান থেকে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত হবে না-তার প্রমাণ নেই। কারণ বাদুড়ের লালা এবং প্রস্রাব থেকে ভাইরাসটি রসের মধ্যে আসে।

তিনি বলেন, খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার পর নিপাহতে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যায় সাধারণ আট থেকে নয়দিনের মধ্যে। অন্যদিকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসাদের লক্ষণ দেখা যায় ছয় থেকে ১১ দিনের মধ্যে।

এই ভাইরাসবাহিত রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা ৭০ থেকে ১০০ ভাগ। আর যারা বেঁচে থাকেন তাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের স্নায়বিক দুর্বলতায় ভোগেন।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে দেশের ২৮টি জেলায়। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে ১০ বেডের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।

২০০১ সালে দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩২৫ জনের দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩০ জনের। গত বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজই মারা গেছেন।

সম্প্রতি সচিবালয়ে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, চলতি মৌসুমে এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার শতকরা ৭০ শতাংশ।

১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সংক্রমণের উৎস ছিল নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত অসুস্থ শূকর। নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে বিশেষ করে বাদুড় ও শূকর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

আক্রান্ত বাদুড় কোনো ফল খেলে বা খেজুরের রস পান করলে এটির লালা, প্রস্রাব বা অন্যান্য বর্জ্য দিয়ে সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রস দূষিত হয়ে যায়। কেউ সেই ফল বা কাঁচা খেজুরের রস পান করলে তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

জেএন/এমআর

KSRM
আরও পড়ুন
লোড হচ্ছে...
×KSRM