জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে এগিয়ে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নতি সম্ভব হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।

- Advertisement -

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে মিরপুর সেনানিবাসে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স’ ও ‘আর্মড ওয়ার কোর্স’ এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

- Advertisement -google news follower

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে, অন্যথায় স্বাধীনতার চেতনা ধরে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না। জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

সরকার প্রধান জানান, বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’

- Advertisement -islamibank

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে প্রমাণ হয়, সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পরে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করবো। আমাকে অনেকে বলেছিল, কখনো সম্ভব না। এমনকি অনেক দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম, তারা বলেছিল এটা সম্ভব না। অসম্ভবকে সম্ভব করা- এটাই বাংলাদেশের চরিত্র। এটা আমরা করতে পারি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম। তখনও অনেকে মুচকি হেসেছিল। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। আজ গ্রামে বসে ছেলে-মেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং করে ডলার আয় করে। এই সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। তার ওপর আবার মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের সঙ্গে আবার স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন। যার ফলে আজকে আন্তর্জাতিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত দেশগুলো বা ধনী দেশগুলো আপনারা জানেন যে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, তারা হিমশিম খাচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ, জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থায় আমি বলতে পারি যে, বাংলাদেশকে এখনও স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’

একটি মহল সম্পর্কে সচেতন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানা কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা একটা মহল করে যাচ্ছে। সেখানে আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, যখন আমি সরকার গঠন করেছিলাম ’৯৬ সালে, তখন আমি রিজার্ভ পেয়েছিলাম মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলার।

‘দ্বিতীয়বার যখন সরকার গঠন করি ২০০৯-এ, তখন পেয়েছি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার। আমরা সেই ৫ বিলিয়নকে ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।’

রিজার্ভ কীভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, তার ব্যাখ্যাও ছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে সবখানে যাতায়াত বন্ধ থাকা, বিদেশ গমন বন্ধ ছিল, আমদানি বন্ধ ছিল, অন্য দেশগুলোতেও যখন একই অবস্থা, সেই কারণে এটা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু সেখানে থেমে থাকিনি। আমরা ভ্যাকসিন ক্রয় করে বিনা মূল্যে দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশও কিন্তু বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন দেয়নি।’

ভ্যাকসিন ও ভ্যাকসিন প্রয়োগের সরঞ্জাম ক্রয়, পরিবহন, সংরক্ষণেও বিপুল অর্থ খরচ হলেও জনগণকে তা বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ জন্য করোনাকে আমরা মোকাবিলা করতে পেরেছি, অর্থনীতিকে ধরে রাখতে পেরেছি।’

কিন্তু যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সব কিছু দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এনে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা এখানে কোনো কার্পণ্য করিনি। আমাদের ডলার খরচা করতে হয়েছে, রিজার্ভ খরচা করতে হয়েছে। আমরা করেছি। কিন্তু তার পরও আমাদের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনিয়োগ হচ্ছে। সার থেকে শুরু করে সব কিছু আমাদের কৃষকদের কাছে খুব স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি।’

জমি অনাবাদি না রেখে কিছু না কিছু উৎপাদনে আবারও তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যে মন্দাটা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে খাদ্য মন্দা, সেটা যেন আমাদের দেশে কখনও না আসে।’

দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা হলেও নিজেদের সীমিত গ্যাস ও আমদানি নির্ভরতার কারণে সেখানে সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সেই সমস্যাটাও আমরা আস্তে আস্তে উত্তরণ ঘটিয়েছি।’

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কোনো রকম বিলাসিতা চলবে না। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ধাক্কাটা আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং পড়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ সারাবিশ্বটা হচ্ছে এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্ব হচ্ছে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সেটা মাথায় রেখে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাব। আমাদের সাশ্রয়ী হয়ে আমাদের দেশ, আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করে চলতে হবে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয়ভাবে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি-২০১৮ প্রণয়ন করেছি। আমাদের সব সময় এটা লক্ষ্য, বাংলাদেশকে আমরা আর্থসামাজিকভাবে উন্নয়ন করব। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মাদক, দুর্নীতি-এর থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রেখে আর্থসামাজিক উন্নতি আমরা করে যাব।’

যুদ্ধ-সংঘাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের একটা প্রতিরক্ষা নীতিমালা দিয়ে গেছেন : “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”। আমরা অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ‘সেটা আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কোনো সমস্যা কারও সঙ্গে থাকলে আমরা তা সমাধান করি, নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে।’

উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কোনো বিরোধ ছাড়াই সমুদ্রসীমা এবং স্থলসীমা নির্ধারণ ও ছিটমহল বিনিময়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের উন্নয়নে সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে যদি আমরা স্বাবলম্বিতা অর্জন করতে না পারি, তাহলে আমাদের যে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার যে চেতনা, সেটা আমরা ধরে রাখতে পারব না। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই। আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM