এমপি লিটন হত্যায় প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন চন্দন

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চন্দন কুমার রায় এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

- Advertisement -

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সোমবার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

- Advertisement -google news follower

এমপি লিটন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডের আসামি চন্দনকে রোববার রাতে সাতক্ষীরার ভোমরা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

চন্দনকে গ্রেপ্তার নিয়ে বিস্তারিত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নিজ বাড়িতে গুলিতে নিহত হন গাইবান্ধা-১ আসনের তৎকালীন এমপি লিটন। এ ঘটনায় নিহতের ছোট বোন সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন ছাড়া বাকি সাতজন গ্রেপ্তার হন।

- Advertisement -islamibank

তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর বিচার শেষে গ্রেপ্তার ছয়জন এবং পলাতক আসামি চন্দনসহ সাতজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। কারাগারে মৃত্যু হয় মামলার আসামি সুবল চন্দ্রের। পলাতক চন্দনকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও চন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের কমান্ডার জানান, সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি কাদের খানের পরিকল্পনায় হত্যাটি সংঘটিত হয়। কাদের খান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকার নির্বাচিত এমপি ছিলেন। দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির বিষয়ে লিটন অভিযোগ উত্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে লিটন এমপি নির্বাচিত হন।

র‌্যাব জানায়, আগের ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও লিটনকে সরিয়ে আবার এমপি হওয়ার লোভে মূলত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন কাদের খান। ২০১৬ সালে প্রথম দিকে এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে চন্দনকে জানান কাদের খান। চন্দন ও কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর লিটনকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গ্রেপ্তার চন্দন কুমার রায় সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহদপ্তরবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় এমপি লিটনের সমর্থিত লোকজনের সঙ্গে তার মারামারি হয়। এতে চন্দন গুরুতর আহত হন।

চন্দনের বরাতে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, নিজের বিরুদ্ধে থাকা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে এমপি লিটনের সহযোগিতা চান চন্দন, কিন্তু আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলায় তিনি তার (লিটন) প্রতি ক্ষুব্ধ হন।

তিনি জানান, বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে চন্দনকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেন এমপি লিটন। পরবর্তী সময়ে কাদের খানের পিএস ও এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে কাদের খানের সঙ্গে চন্দনের সখ্য গড়ে ওঠে।

চন্দনের ভগ্নিপতি সুবল রায় এমপি লিটনের বাড়ির দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন। সে সুবাদে এমপি লিটনের গমনাগমনের বিষয়ে তথ্য জানা সহজ ছিল চন্দনের। এমপি লিটনকে হত্যাকাণ্ডের কয়েকটি পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় চন্দনের সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের নতুন পরিকল্পনা করেন কাদের খান।

র‍্যাবের কর্মকর্তা জানান, এমপি লিটনের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে আবদুল কাদের খান ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের তথ্য দিতেন চন্দন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা ও ড্রাইভার হান্নান অস্ত্র চালানো ও হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত পালানোর প্রশিক্ষণ নেন।

তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের অক্টোবরে এমপি লিটনের ঢাকা থেকে গাইবান্ধা আসার তথ্য দেন চন্দন। তারা মাঝপথে হত্যার পরিকল্পনা নিলেও লিটন গাবতলী এসে ফিরে যাওয়ায় সেটি ভেস্তে যায়। একই বছরের ডিসেম্বরে লিটনকে তার সুন্দরগঞ্জের বাড়িতেই হত্যার পরিকল্পনা হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন চাচাতো ভাই সুবল এবং চন্দন লিটনের বাড়িতে ছিলেন এবং লিটন কখন, কী অবস্থায় থাকেন, তার খোঁজখবর অন্যদের দিতে থাকেন।

র‍্যাব জানায়, ওই দিন বিকেলে চন্দন জানান, এমপি লিটন তার নিজ বাড়িতে একা অবস্থান করছেন। এ খবরের ভিত্তিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকারী শাহীন, রানা ও মেহেদী মোটরসাইকেলে করে লিটনের বাড়িতে যান এবং গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।

হত্যায় জড়িত কাদের খানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করায় চন্দন ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। হত্যার ১৫ থেকে ১৬ দিন পর তিনি স্বজনদের সহযোগিতায় ভারতে আত্মগোপন করেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ভারতে অবস্থানের সময় চন্দন রংপুর ও গাইবান্ধা সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাতেন। মাদকসংক্রান্ত কাজে কিছুদিন ধরে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। সে তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী ভোমরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

জয়নিউজ/পিডি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM