প্রতিদিন ২৫০ টন বর্জ্য যাচ্ছে কর্ণফুলীতে, মানবদেহেও ঢুকছে

কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন ২৫০ টন প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্য পড়ছে, ঢুকছে মানবদেহেও। এর ফলে বিভিন্ন রোগ যেমন ছড়াচ্ছে, তেমনি চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বর্জ্য।

- Advertisement -

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন।

- Advertisement -google news follower

চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কর্ণফুলী নদীতে গবেষণা চালিয়ে পলিথিনের বিরূপতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন পিয়াল ও আল আমিন।

- Advertisement -islamibank

মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় পিয়াল বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে ২৪৯ টন হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এসব বর্জ্যের মধ্যে আবার ৩৫.৬১ ভাগ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য।

২৪৯ টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের মধ্যে সংগ্রহ করা হয় ১০৯ টন। ২০৩২ সালের মধ্যে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে ৩১৩ টনে দাঁড়াবে।

বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নদীর তলদেশ কিংবা অন্যান্য স্তরে ভাসতে থাকা এসব বর্জ্য খাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্লাস্টিকে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যাল মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশে যাচ্ছে মানুষের শরীরেও।

প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য সৃষ্টির কারণ হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যত্রতত্র ছুড়ে ফেলা, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকা, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া, পুড়িয়ে না ফেলা, ক্ষতিকর দিকগুলো না জানা ও অপচনশীলতাকে চিহ্নিত করা হয়।

কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, পুনর্ব্যবহার, পাটের ব্যাগ-কাগজের ঠোঙার ব্যবহার বাড়ানো, জনসচেতনতা তৈরি, প্লাস্টিকদ্রব্য ফেরতে পুরস্কার দেওয়া হলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব বলে গবেষণায় উঠে আসে।

এ সময় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রামের প্রাণ। এ নদী সংকটে পড়লে জলবিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানান সংকটে পড়বে চট্টগ্রামের আপামর মানুষ, তথা পুরো দেশ।

‘কর্ণফুলীকে বাঁচাতে হলে সবার আগে পলিথিনের উৎপাদন সমূলে বন্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।’

নদী গবেষক ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম চেপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, প্রতিদিন শত শত টন প্লাস্টিক ও পলিথিন কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এসব পলিথিন নদীর মাছেরা খেয়ে থাকে। এভাবে মাছের সাহায্যে মানবদেহে যাচ্ছে পলিথিনে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যাল মাইক্রোপ্লাস্টিক।

চট্টগ্রামের নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীর পলিথিন বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে মিশছে। এতে নদীর তলদেশে পলিথিনের বড় স্তর জমেছে।

‘প্লাস্টিক সহজে রিসাইকেল করা গেলেও পলিথিন সহজে রিসাইকেল করা যায় না। এসব পলিথিন নদী থেকে সাগর পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে কর্ণফুলী নদীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এমনকি সাগরের বড় তিমি মাছও পলিথিনের প্রভাবে মারা যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম চেপ্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, পরিবেশ সংগঠক মনোজ কুমার দেব প্রমুখ।

জেএন/কেকে

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM