দেশে দিনে দিনে বাড়ছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ

সারাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্যই উঠে এসেছে।

- Advertisement -

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৩৬৫ জন কন্যাশিশু ও নারী। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৯১ জন। বিশিষ্টজন মনে করছেন, গণপরিবহন, রাস্তাঘাটসহ সর্বত্র নারী ও শিশুর নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

- Advertisement -google news follower

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবার ও সমাজে অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অর্থাৎ ধর্ষণ, তালাক, পারিবারিক সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, পাচার, অপহরণ ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

তাছাড়া দেশে অনেক ভালো ভালো আইন থাকলেও যথাযথভাবে এগুলোর প্রয়োগ না হওয়ায় নির্যাতনের ঘটনা কমছে না বলেও মত প্রকাশ করেন তারা।

- Advertisement -islamibank

একজন ভুক্তভোগীকে বিচার পাইয়ে দিতে হলে তাঁর জন্য কিছু সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাও নিতে হয়। সরকার সে ক্ষেত্রে কতটুকু ব্যবস্থা নিতে পারছে, সে প্রশ্নও আসে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ হাজার ৩৬৫ জন কন্যাশিশু এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৯১ জন নারী।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২২ জন নারী ও কন্যাশিশুকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ৭ জন। ৭০ জন কন্যাশিশুসহ ১০৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

এ ছাড়া গেল আগস্ট মাসেই শুধু নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৬৬ জন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬২ জন কন্যাশিশুসহ ৯৮ জন। এর মধ্যে ২২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২২ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ১৮ জন কন্যাশিশুসহ উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ১৯ জন। তাদের মধ্যে একজন আত্মহত্যা করেছে।

পাচার হয়েছে ৩ কন্যাশিশুসহ ২১ জন। অ্যাসিডদগ্ধের শিকার হয়েছে দু’জন। একজন অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫ জন, তাদের মধ্যে একজন কন্যাশিশুসহ ৫ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। ১৩ কন্যাশিশুসহ ১৫ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। তিন কন্যাশিশুসহ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে ৭ জন। বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ৫টি।

১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মহিলা পরিষদ।

এর আগে ব্র্যাকসহ কয়েকটি সংগঠন পরিচালিত জরিপে জানা যায়, দেশের গণপরিবহন নারীবান্ধব তো নয়ই; কখনও কখনও চরম বৈরী ঘটনা সভ্যতা-মানবতার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়।

গণপরিবহনে চলাচল করা কিশোরী, তরুণী ও নারীদের ৬৩ শতাংশ নানা ধরনের হয়রানির শিকার। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার।

নিউজ বাংলার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমাদের দেশে কোনো অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটলে বা এ নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা হলে আইন প্রণয়ন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। বিষয়টি যেন এ রকম যে আইনের অভাবেই এত দিন অপরাধটি হয়ে আসছিল বা আইন না থাকার ফলেই অপরাধীদের শাস্তি দেয়া যাচ্ছিল না।

তবে বাস্তবে দেখা যায়, প্রায় সব বিষয়েই আমাদের আইন রয়েছে। যুগের প্রয়োজনে কিছু কিছু নতুন আইন করা প্রয়োজন হলেও নির্যাতন বা ধর্ষণের মতো অপরাধ দমনের জন্য নতুন করে আইনের প্রয়োজন নেই।

ধর্ষণের মতো অপরাধ দমনের জন্য ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালেই দেশে আইন করে গেছে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইন অপরাধ বিজ্ঞানের একটি অভিধান। অনেক অপরাধের মৌলিক নীতিই এখানে উল্লেখ আছে। প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে নতুন নতুন আইন করতে হয়েছে।

যেমন- দ্রুত বিচার আইন, নারী ‍ও শিশু নির্যাতন ও দমন আইন ইত্যাদি। এ আইনগুলো মূলত মূল অপরাধের ক্ষেত্রটিকে আরও প্রসারিত করেছে, যাতে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করা যায় অথবা বিচারপ্রক্রিয়া আরও দ্রুত করা যায়।

আসল কথা হচ্ছে, শুধু আইন করে অপরাধ দমন করা যায় না। যদি তা-ই হতো তবে দ্রুত বিচার আইন বা নারী ‍ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মতো কঠিন আইন হওয়ার পরে এ দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন হতো না।

আইন করে বা কঠিন দণ্ড আরোপ করা হলেই অপরাধ দমন হয় না। আইন সহজ হতে পারে, দণ্ডও লঘু হতে পারে-মূল কথা হলো আইনের প্রয়োগ ও সব অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করা।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM