শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে

বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির প্রধান বিচারপতি ছয়বারের এই প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পাঠ করান।

- Advertisement -

শপথ চলাকালে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীরা রনিলকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেন।

- Advertisement -google news follower

এর আগে, বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো ভোটাভুটিতে অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন ৭৩ বছর বয়সী রনিল।

বুধবার দেশটির ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে আয়োজিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন ২২৩ এমপি। এর মধ্যে চারটি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়।

- Advertisement -islamibank

রনিল বিক্রমাসিংহে পান ১৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সাংবাদিক ও এমপি দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা পান ৮২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বামপন্থি নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়াকা পান শুধু তিন ভোট।

পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া হিসেবে এই তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গতকাল মঙ্গলবার সফল ও চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বুধবার সকাল ১০টায় পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবিবর্ধনের উপস্থিতিতে শুরু হয় অধিবেশন। ফল ঘোষণা করা হয় স্থানীয় সময় দুপুর পৌণে ১টার দিকে।

গেল সপ্তাহে তীব্র বিক্ষোভের মুখে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপ হয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান। এর আগে তিনি পদত্যাগপত্রে সইও করেন। এর পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এর পর থেকে প্রেসিডেন্ট পদটি শূন্য হয়ে পড়ে।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা রনিলকে মেনে নেননি। তারা গোতাবায়াসহ রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে।

কে এই রনিল

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ১২ মে শপথ নেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে।

দ্বীপরাষ্ট্রটির ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ। সিলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি।

সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে ইউএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। সেসময় তিনি কেলানিয়া নির্বাচনী এলাকায় প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জুনিয়াস রিচার্ড জয়েবর্ধনের ভাইপো তিনি। জয়াবর্ধনের নতুন সরকার গঠিত হলে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী হন রনিল। এরপর যুব ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার সরকারে শ্রমমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসাকে হত্যা করা হলে সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী ডি বি উইজেতুঙ্গা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। আর উইজেতুঙ্গার প্রধানমন্ত্রীর পদে স্থলাভিষিক্ত হন রনিল বিক্রমাসিংহে।

১৯৯৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে গামিনী দিশানায়েক হত্যাকাণ্ডের পর ওই বছরের নভেম্বরে রনিলকে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত করা হয়।

২০০১ সালে তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি দেশটির প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল সিরিসেনা তাকে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

২০১৫ সালের সংসদীয় নির্বাচনে বিক্রমাসিংহের দলীয় জোট ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট ফর গুড গভর্ন্যান্স ১০৬ আসন লাভ করে। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির ৩৫ সদস্যকে নিজ মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফের নির্বাচিত হন।

কিন্তু ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে হয় রদবদল। তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপাল সিরিসেনা। তার স্থলে তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

তবে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিরিসেনা পুনরায় তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ২০ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন এবং মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী হন।

২০২০ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি জয়ী হতে পারেননি। তিনি বর্তমানে ইউএনপির কলম্বো জেলার সংসদ সদস্য। ২০২১ সালের ২৩ জুন তিনি শপথ নেন।

বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা

সরকারবিরোধী টানা বিক্ষোভের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান গোতাবায়া রাজাপাকসে। পরে সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। এর আগেই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রনিল বিক্রমাসিংহে শপথ নেন গত শুক্রবার।

শপথ নেয়ার পরপরই সর্বদলীয় সরকার গঠনে কাজ করতে আইনপ্রণেতাদের নির্দেশ দেন রনিল।

কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ

তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ।

এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।

বিক্ষোভ দমাতে এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন মাহিন্দার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো মাত্রা আরও তীব্র হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় মে মাসে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১২ মে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

এই পর্যায়ে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন এক এমপি। অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপির বাড়ি ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

জেএন/এএম

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM