নেই যত্রতত্র বর্জ্য, মেয়র ম্যাজিকে মুগ্ধ নগরবাসী

এইতো কয়েক বছর আগেও নগরের দিদার মার্কেটের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে হাঁটতে হত। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ‘কষ্টটা’ করতে চাইতেন না অনেকেই। আবার ফেললেও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তা ঠিক সময়ে সরিয়ে নিতেন না বলেও অভিযোগ ছিল। সেই দিনের শেষ দেখছে নগরবাসী। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রীতিমতো ম্যাজিক দেখাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। করিৎকর্মা এই নগরপিতার নির্দেশনা ও যোগ্য তত্ত্বাবধানে বন্দরনগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। নগরের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক কাউছার খান

নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন ক্লিন এন্ড গ্রীন সিটি গড়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই সাফল্যের পেছনের কারিগর হচ্ছেন এক ঝাঁক পরিচ্ছন্ন কর্মী। যারা রাত জেগে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কাজ করে যাচ্ছেন। আর নির্ঘুম এই শ্রমিকদের ঘামে পরিচ্ছন্ন নগর উপভোগ করতে পারছেন নগরবাসী।

- Advertisement -

নগরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতে ঝাড়ু নিয়ে হেঁটে-হেঁটে সড়কে ঝাড়ু দিচ্ছেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। ময়লাগুলো টিনের বক্সে করে তুলে নিয়ে ফেলছেন আবর্জনা বহনকারী গাড়িতে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরের বিভিন্ন সড়কে দেখা মিলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এমন এক ঝাঁক পরিচ্ছন্ন কর্মীর। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতার কাজ করে তারা সবাইকে উপহার দেন পরিচ্ছন্ন নগরী।

- Advertisement -google news follower

রাত সাড়ে বারোটা। নগরের ব্যস্ততম এলাকা আন্দরকিল্লায় নেই মানুষের ঢল। ঝাড়ু হাতে কাজ করছেন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক স্বপন নাথ। প্রায় ২৭ বছর যাবত তিনি এই পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। এর মধ্যে ২১ বছর অস্থায়ীভাবে কাজ করেছেন তিনি। পাঁচ বছর হচ্ছে স্থায়ী হয়েছে চাকরি।

স্বপন নাথ জয়নিউজকে বলেন, ‘এই ময়লার মধ্যেই আমাদের রুটি-রুজি। আমরা এই কাজ করি পরিবারের সদস্যদের পরিচ্ছন্ন জীবন দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই কম বেতনে পরিবার নিয়ে চলা অনেক কষ্টকর। তারপরও এই কাজ করছি জীবিকার তাগিদে। তবে আ জ ম নাছির স্যার মেয়র হওয়ার পর আমাদের বেতন বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি রাতে ময়লা পরিষ্কার করার সুযোগ করে দেওয়ায় ভালোভাবে কাজ করতে পারছি। কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। তবে কাজের সুবিধার জন্য ঝাড়ুগুলো আরও টেকসই হলে ভালোভাবে ময়লা পরিষ্কার করতে পারতাম। কিন্তু একটা ঝাড়ু বেশি দিন টিকে না।’ মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘ঝাড়ুগুলো আরো টেকসই হলে ভালোভাবে সড়কগুলো পরিষ্কার করতে পারতাম।’

- Advertisement -islamibank

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যা আছে। এই যেমন, আমরা আগে শীতের কাপড় পেলেও গত সাড়ে তিন বছর কোনো শীতের কাপড় পাইনি। তাই মেয়রের কাছে অনুরোধ আমাদেরকে যেন শীতের কাপড় দেওয়া হয়।’

আগে ময়লা পরিষ্কার করতে কষ্ট হত উল্লেখ করে এই পরিচ্ছন্ন কর্মী বলেন, ‘মেয়র নাছির স্যার দায়িত্ব নেওয়ার পর আর কষ্ট হয় না। কারণ এখন রাতে ময়লা পরিষ্কার করছি। প্রতিদিনের ময়লা প্রতিদিনের পরিষ্কার হওয়ার কারণে কাজ এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।’

চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরের পরিচ্ছন্নতার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার ৫শ’ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছেন পরিচ্ছন্নতার কাজে। দৈনিক ৩২৪ টাকা করে মজুরিতে মাস্টাররোলে কাজ করেন তারা। মাসিক বেতন পান ৯ হাজার টাকার চেয়ে একটু বেশি। পরিচ্ছন্ন কাজে ৮১ জন সুপারভাইজার কাজ করেন।

অন্যদিকে, রাস্তার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে গিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নিজেরাই পড়ছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। নিয়মিতভাবে কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। ঘরের স্বাভাবিক খরচের সঙ্গে তাই যোগ করতে হচ্ছে চিকিৎসা আর ওষুধের অতিরিক্ত খরচ।

শ্রমিক সাকের দাশ জয়নিউজকে বলেন, ‘সারা রাত এই ময়লা ওঠানোর কাজ করি। এই দুর্গন্ধ ময়লা আবর্জনায় কাজ আমি মেনে নিয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার শরীর আর এই কষ্ট মানতে চাইছে না।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘মাস শেষে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। তার ওপর শরীরে রোগের শেষ নেই। শরীরে রোগ বাড়ে, চাল ডালের দাম বাড়ে কিন্তু আমাদের বেতন তেমন বাড়ে না। তবে মেয়র আ জ ম নাছির স্যার আমাদের বেতন বাড়িয়েছেন। তবে সমস্যা হচ্ছে আগে আমরা শীতের পোশাক পেতাম। এবার পাইনি। তাই এই শীতের মধ্যে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে।

তিনি মেয়রের কাছে অনুরোধ করেন শীতের পোশাক দেওয়ার জন্য। একইসঙ্গে বর্ষার সময় রেইনকোট ও টেকসই ঝাড়ু দেওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।

সাকের দাশ আরো বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে অস্থায়ীভাবে চাকরি করছি। দৈনিক ৩২৪ টাকা করে মাসে ৯ হাজার টাকার মত বেতন পাই। আমরা ৮ ঘণ্টা কাজ করি। তবে চসিক ডোর টু ডোর লোক নেওয়াতে আমাদের বেতন কমে গেছে। আগে দিনে কাজ করতাম। এখন রাতে কাজ করার কারণে আমাদের সুবিধা হয়েছে। কোনো গাড়ির ঝামেলা নেই। মানুষের ঝামেলা নেই। সহজে ময়লা পরিষ্কার করতে পারছি।’

নগরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কথা হল কর্মজীবী রাশেদের সঙ্গে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, ‘আগে সকালে অফিসে যেতে হত ময়লা আর্বজনা দেখে। আবার হয়তো দুর্গন্ধের কারণে নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে হত। কিন্তু রাতে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাতে ময়লা পরিষ্কার করে ফেলায় এখন দুর্গন্ধ লাগে না।’ এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নগরপিতাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল মান্নান সিদ্দিক জয়নিউজকে বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরের রূপ থাকে পরিচ্ছন্ন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগর অপরিচ্ছন্ন হতে শুরু করে। আমরা যারা এই নগরের বাসিন্দা তাদের একটু সচেতনতাই পারে নগরের সৌন্দর্য দীর্ঘস্থায়ী করতে।’

পরিচ্ছন্নতা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আমরা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সচেতনতামূলক ব্রিফিং দিয়ে থাকি, যাতে তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘এই নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এত সহজ কাজ না। সচেতন জনগণ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও একঝাঁক পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নগরবাসী পায় এই সুন্দর পরিচ্ছন্ন নগর। অনেকে যেখানে রাস্তার পাশে ময়লা দেখে মুখে কাপড় দিয়ে চলে যান, সেখানে ওই পরিচ্ছন্ন শ্রমিকরাই হাত দিয়ে সেই ময়লা পরিষ্কার করে। তাই এই পরিচ্ছন্ন শ্রমিকদের কষ্টের কথা চিন্তা করে হলেও নগরবাসীকে একটু সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

নগরবাসী যদি যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলেন তাহলে এই পরিচ্ছন্ন শ্রমিকদের কষ্ট অনেক কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন চসিকের এই কর্মকর্তা।

জয়নিউজ/জুলফিকার

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM